ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের মধ্যে যেসব চুক্তি হবে, তার খসড়া আগে প্রকাশ না করলে হরতাল দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গতকাল রাজধানীতে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি বলেন, জনগণকে না জানিয়ে কোনো গোপন চুক্তি করা হলে প্রয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় এবং তার ঢাকা অবস্থান পর্যন্ত হরতাল দিতে আমরা বাধ্য হবো।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা এবং তারেক রহমানের অর্থ পাচার মামলার অভিযোগপত্র গঠনের প্রতিবাদে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এর আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম।
আগামী ৬ সেপ্টেম্বর দুইদিনের সফরে ঢাকা আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমানে একটি অগ্রগামী দল অবস্থান করছে ঢাকায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে গয়েশ্বর বলেন, আপনি ভারতের সাপোর্টার, ভালো কথা। ভারতে গিয়ে কী কী চুক্তি করেছেন, তা আপনার সংসদে অথবা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করুন।
তিনি ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়ে সুরাহার দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা সমস্যার সমাধান চাই। যে চুক্তিতে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়া হবে, তা এ দেশের জনগণ মেনে নিতে বাধ্য নয়।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ফেলানী হত্যার জন্য ভারত সরকারকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, আমরা আশা করব, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সফরের আগেই এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাইবেন।
প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্টে প্রকাশিত ‘পয়জনাস পলিটিক্স ইন বাংলাদেশ’ ও ‘ইন দ্য নেম অব দ্য ফাদার’ শিরোনামের প্রতিবেদন সম্পর্কে গয়েশ্বর বলেন, যা সত্যি, ইকোনমিস্ট তাই লিখেছে। দুর্নীতির চিত্র দেশের মানুষ জানে। আপনার (প্রধানমন্ত্রী) ছেলে আমেরিকায় কত টাকা রোজগার করে সেখানে থাকেন, তা একদিন দেশের মানুষ জানতে চাইবে।
গত ৩০ জুলাই ইকোনমিস্টে প্রকাশিত ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ : এম্ব্রেস্যাবল ইউ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূরাজনৈতিক স্বার্থে প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে ভারত। এ জন্য গত সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের জন্য আওয়ামী লীগকে বস্তা বস্তা টাকা দিয়েছে দেশটি, যার প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ সরকার।
‘পয়জনাস পলিটিক্স ইন বাংলাদেশ’ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল হলেও রাজনীতি চলছে উল্টো দিকে। যুদ্ধাপরাধের বিচার, সংবিধান সংশোধন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়গুলো তুলে ধরে কার্যত শেখ হাসিনা সরকারকেই এ জন্য দায়ী করেছে পত্রিকাটি।
দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ‘দোজখ’ আখ্যায়িত করে গয়েশ্বর বলেন, অবৈধ ফখরুদ্দীন-মইন উ আহমেদ সরকারের সময় থেকে এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের হয়রানি করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা মিথ্যা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, দুদক মামলা করে সরকারের চক্রান্ত বাস্তবায়ন করবে আর আমরা বসে বসে চীনাবাদাম খাব, তা ভাবাটা সঠিক হবে না।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট্রের নামে জমি কেনায় আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গত ৮ আগস্ট এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
সংগঠনের সহ-সভাপতি আবুল হাসেমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তৃতা করেন সাবেক মন্ত্রী নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সহ-সভাপতি একে আজাদ, এবিএম স্বপন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহবুবুল আলম, দফতর সম্পাদক নুরুন্নবী লিটু প্রমুখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন