পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১১

কে এগিয়ে?

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় বিগত চারদলীয় জোট সরকারকে। আর যে ক'জন মন্ত্রী ও এমপি'র কারণে ওই সরকারকে এ নেতিবাচক পরিচয়ে পরিচিত হতে হয়েছে তাদের অন্যতম হলেন তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ হিসেবেই তাকে গণ্য করা হয়। এহেন দুর্নীতিবাজ এই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাপ্তাহিক শীর্ষ কাগজে ১ নভেম্বর ২০০৩ একটি শীর্ষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, "যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এখন হুদা প্রাইভেট কোং" শিরোনামে। জোট সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় ২ বছর ১ মাস পর এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়, যা ছিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রথম তো বটেই। ওই সরকারের কোনো মন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধেও প্রকাশিত প্রথম কোনো প্রতিবেদন। তার আগ পর্যন্ত তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের আর কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। 
দিন পরিবর্তনের সরকার হিসেবে পরিচিত বর্তমান মহাজোট সরকারের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু সেই সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হতে কিন্তু ২ বছর সময় লাগেনি। দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক মাসের মাথায় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হতে শুরু করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সচেতন মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, দুর্নীতিতে কে এগিয়ে? সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা নাকি বর্তমান মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন? 
দায়িত্ব গ্রহণের সামান্য সময়ের মধ্যেই একের পর এক সৈয়দ আবুল হোসেন যেভাবে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, ঘটিয়ে চলেছেন অনিয়ম আর দুর্নীতির নিত্য-নতুন উদাহরণ, যেভাবে সমালোচনা ও বিতর্কের শীর্ষে উঠে এসেছেন তাতে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুব বেশি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না। ইতিমধ্যেই তার কর্মকা নিয়ে দলের মধ্যে, এমনকি জাতীয় সংসদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও অনেকবার কথা উঠেছে। মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ে সংসদীয় কমিটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্তের পদক্ষেপ নিতে চেয়েছে। কিন্তু পারেনি। মাত্র কয়েক দিন আগে প্রকাশ্যে জাতীয় সংসদের অধিবেশনেই দলের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমেদ যোগাযোগ মন্ত্রীর অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। দলের মধ্যেকার সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এরপরও তিনি শুধু বহাল তবিয়তেই নন, বরং বেশ দাপটের সাথে তার দুর্নীতি এবং অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। যা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় বসা সরকারের ভাবমূর্তিকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
নাজমুল হুদা বনাম আবুল হোসেন
জোট সরকারের শুরু থেকেই যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব পান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। প্রতিমন্ত্রী হন সালাহ উদ্দিন আহমদ। শুরুতে মনে করা হয়, সালাহ উদ্দিন আহমদ বেশি ক্ষমতাবান হবেন। যেহেতু আগের বিএনপি সরকারের আমলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নেকনজরের। তাছাড়া তারেক রহমানেরও ঘনিষ্ঠ এবং হাওয়া ভবনের সদস্য হিসেবে পরিচিত। কিন্তু না দেখা গেলো নাজমুল হুদার সঙ্গে কোনক্রমেই পেরে উঠছেন না। এর কারণ ছিল সম্ভবত একটিই, তা হলো আর্থিক সম্পর্ক।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার দফতরে প্রায়শই ঠিকাদার, প্রকৌশলী এবং তদবিরবাজদের আনাগোনা থাকত। তার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ ছিল তিনি প্রায় প্রত্যেক কাজেই কমিশন নিতেন। আর সেসব সরাসরি নিজেই গ্রহণ করতেন। তার নিজের কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছিল না। ব্যক্তিগত জীবনে তার ঠিকাদারি বা ব্যবসায়িক কোনো প্রতিষ্ঠানের কথা শোনা যায়নি। মূলত কমিশনই ছিল তার অর্থ আয়ের অন্যতম উৎস। 
প্রচারিত ছিল, হাওয়া ভবনে যেসব মন্ত্রী সরাসরি নগদ অর্থ দিতেন, তাদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন নাজমুল হুদা। বিভিন্ন সময় হুদা নিজেও এ কথা খোলাখুলি স্বীকার করতেন ঘনিষ্ঠদের কাছে। অন্য মন্ত্রীদের কারো কারো কাছে বলতেন- আপনারা মনে করেন সব টাকা আমি খাই। আসলে তা না। ওখানে (হাওয়া ভবন) দিয়ে আসতে হয় না? ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের বলতেন- দিন দিন। আপনারা না দিলে দলের ফান্ড আসবে কোত্থেকে? এখনই টাকা নিয়ে যেতে হবে। আর এই দলের ফান্ড মানেই আসলে ছিল হাওয়া ভবন। 
বর্তমান মন্ত্রী অবশ্য নাজমুল হুদার মতো কোথাও অর্থ দেয়ার কথা বলেন না। তবে তিনি কথায় কথায় প্রায়ই বলে থাকেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে এখানে বসিয়েছেন। আমার প্রতি ওনার আশির্বাদ আছে। তাই কে কী বললো, কোন পত্রিকায় কী লিখলো এতে আমার কিছু যায় আসে না। পত্রিকায় লিখলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়বে। তিনি এও বলে থাকেন যে প্রধানমন্ত্রী নাকি তাকে বলেছেন, সব পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে লিখলেও তার কিছুই হবে না। বরং তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় লিখলে আরো প্রমোশন হবে। বস্তুত এসব কথা বলে আবুল হোসেন তার এই সব অপকর্মের দায় প্রধানমন্ত্রীর ওপর চাপাতে চাইছেন। যার নেতিবাচক প্রভাব গোটা সরকারের ওপর পড়ছে, সন্দেহ নেই।
আবুল হোসেনের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে পত্রিকায় লিখলে যে কিছু হবে না এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ হলো বর্তমান সরকারের আমলে মন্ত্রীদের দুর্নীতি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় যত লেখালেখি হয়েছে তার মধ্যে শীর্ষে আছেন তিনি। এমনকি দুর্নীতিগ্রস্ত বলে পরিচিত জোট সরকারের কোনো মন্ত্রীর দুর্নীতি নিয়ে পাঁচ বছরেও এতোটা লেখালেখি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না, গত দু'বছরে আবুল হোসেনের দুর্নীতি নিয়ে যতটা লেখালেখি হয়েছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি খবরের শিরোনাম হন সরকারি অর্থ অপচয় করে বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় এবং কক্ষ সাজাবার মতো বিষয়গুলোর কারণে। সেই লেখায় কিছুটা কাজ হয়। গাড়ি কেনা বন্ধ হয়, কক্ষ সাজাবার বাজেট কমে যায়। কিন্তু এরপর তার বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে একের পর এক লেখালেখি হয়েছে। সেই সব লেখা আবুল হোসেনকে তার দুর্নীতি থেকে সরাতে পেরেছে বলে মনে হয় না। বরং ক্রমান্বয়ে তিনি যেন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এবং উঠছেন।
যেভাবে উত্থান আবুল হোসেনের
আবুল হোসেন যদিও একসময় স্বৈরশাসক এরশাদের অত্যন্ত কাছের বলে পরিচিত ছিলেন- কিন্তু সময়ের আবর্তে এখন ঠাঁই করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগে। শুধু তাই নয়, সবচে' ক্ষমতাধর মন্ত্রী হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছেন। তবে ক্ষমতার এই জায়গায় তিনি একদিনে আসেননি। বরং ব্যবসায়ী আবুল হোসেন নানা কৌশল অবলম্বন করে, নানা মত ও দলের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখে তবেই আজকের এই অবস্থানে এসে পেঁৗছেছেন। অত্যন্ত সুযোগ সন্ধানী, চতুর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তাই যখন যেখানে ছিলেন, সেখানকার কোনো সুযোগই হাতছাড়া করেননি। যে কারণে অনেক সময়ই নানা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। 
প্রথম জীবনে টিসিবিতে কাজ করেছেন। সেখানে তার দুর্নীতির ব্যাপক প্রচার রয়েছে। ওই সময় সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বলা যায়, বাজার টিসিবিই নিয়ন্ত্রণ করতো। সেই সময়ে এই প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেছেন তাদের প্রায় সবাই দু'হাতে কামিয়ে নিয়েছেন বলে শোনা যায়। বিশেষ করে ডিও ব্যবসা বেশ রমরমা ছিল। যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের রাতারাতি ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে গেছে। আবুল হোসেন এদের একজন। আবুল হোসেনের সম্পদের শুরুটা টিসিবি'র মাধ্যমে হয়েছে বলে প্রচারিত আছে। 
প্রায় প্রতিটি সরকারের কাছে থেকেই নানা সুবিধা আদায় করেছেন আবুল হোসেন। বিশেষ ম্যানেজ প্রতিভার কারণে প্রায় সব সরকারের সাথেই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। যেমন তিনি এরশাদ সরকারের অনেক কাছের একজন ছিলেন। শুধু তাই নয়, সে সময় তিনি কতটা প্রভাবশালী ছিলেন, তা বিভিন্ন জনের কাছে নিজেই গর্ব করে বলে থাকেন। রওশন এরশাদ এবং এরশাদের সঙ্গে সম্পর্কের কথাটা মাত্র কয়েকদিন আগে আবুল হোসেন নিজেই শীর্ষ কাগজ সম্পাদকের কাছে অন্য কথার প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি ওই সময়ের একটি ঘটনারও উল্লেখ করেন। প্রসঙ্গটি আসে শীর্ষ কাগজে প্রকাশিত ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় দফার টেন্ডার বাতিল সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে। টেন্ডার বাতিলের ঘটনার জন্য আবুল হোসেনকে দায়ী করা হয়। প্রতিবেদনে তাকে নেপথ্য নাটের গুরু বলেও আখ্যায়িত করা হয়। নাটের গুরু বলাতে আবুল হোসেন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। শীর্ষ কাগজ সম্পাদককে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই বলে শাসান যে, এরজন্য একদিন মূল্য দিতে হবে।
এ সময় তিনি তার জীবনের পুরনো কাহিনী তুলে ধরেন। কাহিনীটা হলো, এরশাদ সরকারের মন্ত্রিসভায় কাজী জাফর কীভাবে শিক্ষামন্ত্রী হলেন এবং শেখ শহীদ কীভাবে শিক্ষামন্ত্রী পদ হারালেন। সৈয়দ আবুল হোসেন গর্ব করে বললেন, আমিই এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলামকে সরিয়ে কাজী জাফরকে এনে বসিয়েছি। এর পেছনের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, শেখ শহীদ মাদারীপুরে তখন নতুন প্রতিষ্ঠিত সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ এর পাঠদানের অনুমোদন দিচ্ছিলেন না। অবশ্য অনুমোদনের শর্ত অনুযায়ী এলাকা এবং অন্যান্য বিধি মানতে গেলে এই কলেজটি অনুমোদন পাবার কথা নয়। কিন্তু অনুমোদন চাই-ই। শেখ শহীদ চেয়ারে থাকলে কখনো এর অনুমোদন পাওয়া যাবে না। কাজেই তাকে শিক্ষামন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে পরিকল্পনা নিলেন। এই অবস্থায় একদিনকার ঘটনা। এরশাদ প্রায়ই নিয়মিত বিকেলে গলফ খেলার মাঠে যেতেন। আবুল হোসেনও তার সঙ্গে যেতেন। কেটসসহ গলফ খেলার সামগ্রী বহন করতেন। এরশাদকে একদিন সুযোগ বুঝে বললেন, শেখ শহীদ তো শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ভালভাবে কাজ করতে পারছেন না। তার বদলে কাজী জাফরকে ওই জায়গায় দেন। জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে কাজী জাফর বেশ সফল ছিলেন। এরশাদ তখন বললেন- বলছ, কাজী জাফরকে শিক্ষামন্ত্রী করলে ভালো হয়? তখন সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, হ্যাঁ ভাল হয়। 
দেখা গেল, ওই রাতেই শেখ শহীদুল ইসলামের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়। তাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আউট করে কাজী জাফরকে বসানো হয়। এরশাদ এই সময় কাজী জাফরকে বলে দেন- সম্ভবত আবুল হোসেনের কী যেনো কাজ আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। কাজটা করে দিও। কাজী জাফরও বাধ্য ছেলের মতো পরদিন সকালে চেয়ারে বসেই ফোন দিলেন আবুল হোসেনকে। তারপর তার কলেজ এর অনুমোদনের যাবতীয় কাজ দ্রুত হয়ে গেল। 
তিনি জীবনে অনেক কিছুই করেছেন। যারাই তার সঙ্গে টক্কর লেগেছে, এদেরকে পরে পস্তাতে হয়েছে- এসব বোঝানোর জন্যই আবুল হোসেন শীর্ষ কাগজ সম্পাদকের সামনে তার নিজের জীবনের এই কাহিনীটা বর্ণনা করলেন। এ সময় তার কক্ষে আরো কয়েক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। 
এরশাদ সরকারের আমলেই তার ব্যবসায়িক উত্থান। এটা প্রচারিত আছে যে, ওই সময় রওশন এরশাদের কয়েকজন বয়স্ক ছেলে ছিলেন। এরা তাকে 'মা' বলে সম্বোধন করতেন। তিনিও তাদেরকে ছেলের মতো দেখতেন। বিমানবন্দর কেন্দ্রিক বেগম রওশন এরশাদের কিছু গোপন কার্যক্রম ছিল। তা তিনি এই ছেলেদের মাধ্যমেই সম্পন্ন করতেন। এতে মা-ছেলে উভয় পক্ষই বড় অঙ্কের আর্থিকভাবে লাভবান হতেন। 
এরশাদের পতনের পর তার মন্ত্রীদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়লেও আবুল হোসেন ঠিকই ঘুরে দাঁড়ান। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ফান্ডে টাকা দিয়ে নমিনেশন নেন। এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পান। কিন্তু সে সময় পাসপোর্ট কেলেঙ্কারির দায়ে তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তিনি তার ব্যবসায়িক কাজে সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে গোপনে বিদেশে গিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে তিনি দুটি অপরাধ করেছিলেন। মন্ত্রিসভার কোনো সদস্য অন্য কোনো চাকরি বা ব্যবসা করতে পারবেন না। অথচ মন্ত্রিসভায় থেকেও তিনি নিজের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। দ্বিতীয়ত, যে কোনো নাগরিকের দুটি পাসপোর্ট রাখা সম্পূর্ণ বেআইনি। অথচ মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েও সৈয়দ আবুল হোসেন একই সঙ্গে লাল এবং সবুজ দুটি পাসপোর্ট রেখেছিলেন। 
২০০১ সালের দুঃসময়েও তিনি নির্বাচিত হন। কিন্তু শুধু এমপিতে কাজ হয়নি। তাই ওই সময় হাওয়া ভবনকে ম্যানেজ করে ঠিকই তার সকল সুবিধা আদায় করে নিয়েছিলেন। এই সময়ে তার ব্যবসায়িক অধিকাংশ কাজকর্ম চলেছে বিএনপি এমপির ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান হোসাফ গ্রুপের আন-অফিসিয়াল পার্টনার হিসেবে। বড় পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের টেন্ডারে হোসাফের সঙ্গে তার শেয়ার ছিল।
এরপর বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যদিও শুরুতে ৫০ শীর্ষ দুর্নীতিবাজের তালিকায় আবুল হোসেনের নাম উঠেছিল, কিন্তু এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে মিশে যান। ডিজিএফআই'র আতিথেয়তায় নিরাপদে, আনটাচড শুধু নয়, আরামেই দিন কাটান। কাকে কাকে ধরলে টাকা পাওয়া যাবে, এ ব্যাপারে ওয়ান ইলেভেনের নায়কদের পরামর্শকের ভূমিকাও পালন করেন বলে প্রচারিত আছে। এহেন একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে শেষ পর্যন্ত মহাজোট সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। 
জীবন বৃত্তান্তে যা নেই
মন্ত্রীর দায়িত্ব পাবার পর যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তথ্য অধিদফতরের মাধ্যমে নিজের একটি জীবন বৃত্তান্ত প্রচার করেছেন। কিন্তু, সরকারিভাবে প্রচারিত তার এই জীবন বৃত্তান্তে বেশকিছু অসঙ্গতি রয়েছে। নিজের জীবনের অপরিহার্য, গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল আলোচিত কিছু তথ্য তিনি এড়িয়ে গেছেন, যা সাধারণ জনগণের জানার প্রয়োজন ছিলো। 
আবুল হোসেনের জীবন বৃত্তান্তে লেখা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় এম কম ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর বলা হয়, সৈয়দ আবুল হোসেন বাংলাদেশের অন্যতম বিজনেস হাউজ সাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড-এর প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও তিনি অনেকগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। সাকো'র প্রতিষ্ঠাতা এবং এতোগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার কী হঠাৎ করেই হয়ে গেলেন নাকি পারিবারিক ব্যবসা উত্তরাধিকারসূত্রে পেলেন- এসবের কোন উল্লেখ নেই জীবন বৃত্তান্তে। ব্যবসায়ীর খাতায় নাম লেখানোর আগে তিনি যে টিসিবিতে চাকরি করেছে এর উল্লেখ নেই জীবন বৃত্তান্তে।
এছাড়া আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জীবন বৃত্তান্ত থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সৈয়দ আবুল হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর কীভাবে সেই দায়িত্ব চলে গেলো সে কথা এখানে বলা নেই। বস্তুত, তিনি ওই সময় যে ন্যক্কারজনকভাবে মন্ত্রীত্ব হারান তার নজির এদেশের ইতিহাসে তো নেই-ই অন্য কোথাও আছে কিনা জানা নেই। পাসপোর্ট জালিয়াতিতে ধরা পড়ার পর তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীত্ব থেকে বাদ দিয়েছিলেন ওই সময়। এদিকে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হবার আগে তিনি আওয়ামী লীগের অন্য কোন দায়িত্বে ছিলেন কিনা, ছাত্র জীবনে তিনি কোন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন- এসব কিছুই বলা নেই। 
ওয়ান-ইলেভেনের ভূমিকা
ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কার কী ভূমিকা ছিলো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সরকারের নীতিনির্ধারকরা একে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছেন। বলা হয়ে থাকে তোফায়েল, রাজ্জাক, সুরঞ্জিত, আমু, জলিল, ওবায়দুল কাদের, সাবের হোসেন_ এদের মতো বাঘা বাঘা নেতারা বর্তমান সরকারে ঠাঁই পাননি শুধুমাত্র ওয়ান ইলেভেনের সমর্থক হবার কারণেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন, ওয়ান ইলেভেনের নায়করা তাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে মাইনাস করার যে পরিকল্পনা করেছিলো তাতে এই নেতাদের সমর্থন ছিলো। 
বলা হয়ে থাকে, ওয়ান ইলেভেন সরকারের কর্মকা কে যারা সমর্থন করেনি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা ছিলো তাদেরই তিনি এ সরকারের আমলে মন্ত্রীত্বসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। আবুল হোসেনও নিজের এমনই ভূমিকার কথা প্রচার করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভীড়তে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু অবশেষে তার থলের সেই বিড়ালও বেরিয়ে পড়েছে। আবুল হোসেন যে ওয়ান ইলেভেন সরকারের কর্মকা- সমর্থন এবং শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সেই প্রমাণ ইতিমধ্যেই বেরিয়ে এসেছে। তিনি লিখিতভাবেই ওয়ান ইলেভেন সরকারের সংস্কার কর্মসূচিকে সমর্থন দিয়েছেন, এমন তথ্য পত্রিকায় ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। 
তার সেই লিখিত অঙ্গীকারনামা ছাড়াও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাওয়া গেছে। যারা ওই সময় মধ্যস্থতা এবং ব্রিগেডিয়ার বারী-আমিন ও সৈয়দ আবুল হোসেনের মধ্যকার বৈঠকের আয়োজন করেছেন তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে শীর্ষ কাগজের এই প্রতিবেদকের। শেখ হাসিনা, জলিল, ওবায়দুল কাদেরসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা যখন জেলে আটক ও অসহনীয় নির্যাতনের মুখোমুখি সেই সময় আবুল হোসেন নিয়মিত বৈঠক করছিলেন ব্রিগেডিয়ার বারী-আমিনদের সঙ্গে। নিজে গ্রেফতার না হওয়ার শর্তে ওয়ান ইলেভেন সরকারের সব শর্তই মেনে নেন আবুল হোসেন। এই মধ্যস্থতার কাজে সহায়তা করেন আবুল হোসেনেরই ঘনিষ্ঠ দু'জন সিনিয়র সাংবাদিক। ব্রিগেডিয়ার বারীর পক্ষে ওই সময় আন-অফিসিয়ালি এই কাজগুলো করছিলেন বারীর এক সময়ের ব্যাচমেট ও বন্ধু মেজর (অব.) মশিউর (যিনি বারীর হয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং রাজনৈতিক দল গঠনে দায়িত্ব পালন করছিলেন)। মেজর (অব.) মশিউরই প্রথমদিকে এই বৈঠকগুলোর আয়োজন করেন। পরে বারীর সঙ্গে আবুল হোসেনের সরাসরিই যোগাযোগ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে আবুল হোসেন বারীর তত্ত্বাবধানেই রাজার হালে থাকেন। যার প্রমাণ পান ওই দুই সাংবাদিক হাতেনাতে।
হঠাৎ দেখা গেলো, এক সময় এই দুই সাংবাদিক নিজেরাই সৈয়দ আবুল হোসেনের খোঁজ পাচ্ছিলেন না। যে মোবাইল ফোনে আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন সেটি বন্ধ। চিন্তিত হয়ে পড়লেন। খারাপ কিছু ঘটে গেলো না তো আবার। ব্রিগেডিয়ার বারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। বারী তাদের আশ্বস্ত করলেন, কোন সমস্যা নেই। ভালোই আছেন তিনি। আমি বলে দেবো, আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। ওই দিনই ফোন করলেন আবুল হোসেন। দেখাও হলো। যেহেতু আবুল হোসেন শীর্ষ ৫০ দুর্নীতিবাজের তালিকায় ছিলেন। তাই প্রকাশ্যে তার চলাচল করা সম্ভব ছিলো না। উল্লেখ্য, বারীর বন্ধু ও ব্যাচমেট সেই মেজর (অব.) মশিউরকে এখনো মাঝেমধ্যে আবুল হোসেনের দফতরে দেখা যায়। 
দায়িত্ব পেয়েই বিতর্ক
সৈয়দ আবুল হোসেন মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়ার কয়েক মাসের মাথায়ই কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে বসেন। তিনি মন্ত্রণালয়ে তার কক্ষ সাজসজ্জা করতে ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। শুধু তাই নয়, সবার চেয়ে দামি গাড়িতে চড়ার ব্যবস্থা করতেও তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিলেন। কর্মকর্তারাও নির্দেশ মতো তার কক্ষ বিশেষভাবে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অন্য মন্ত্রীরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করা কক্ষে বসতে পারলেও আবুল হোসেনের জন্য বিশেষভাবে সাজাতে হলো তার কক্ষটি। এই সময় মন্ত্রীর কক্ষের বিলাসবহুল সাজসজ্জার আয়োজন নিয়ে পত্র-পত্রিকায় বেশ কয়েকটি রিপোর্ট বেরিয়েছিল। এরপর তিনি বিতর্কিত হন কোটি টাকা ব্যয়ে এলাকা থেকে সংবর্ধনা নিয়ে। আবুল হোসেন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার এক বছর পর এলাকায় যান। এ সময় পুরো এলাকার বড় রাস্তাগুলোতে অসংখ্য সুসজ্জিত তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টারে ছেয়ে ফেলানো হয়। আয়োজকরা বলেছেন, এ আয়োজনের জন্য প্রায় কোটি টাকা খরচ করা হয়। শোনা যায় এ টাকা নাকি মন্ত্রী নিজেই দিয়েছিলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন করতে তিনটি ট্রান্সফরমার বসানো হয়। চার রংয়ের তিন লাখ পোস্টার, শব্দযন্ত্র কলরেডি, মঞ্চ ও আলোকসজ্জা, শত শত কর্মীর কয়েকদিন ধরে খাওয়া-দাওয়া চলেছে। সব মিলিয়ে তার এলাকাকে সাজানো হয়েছিল রাজকীয় সাজে। সিডর ও আইলার ধকলে যে মাদারীপুরের মানুষ এর নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। এলাকার অনেকেরই চাল-চুলো নেই। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এই অবস্থায় একজন মন্ত্রী কীভাবে কোটি টাকা ব্যয় করে সংবর্ধনা নিতে পারেন, এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। 
তদবিরবাজদের উৎপাত
সৈয়দ আবুল হোসেনের আমলে তদবিরবাজদের উৎপাত যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে নাজমুল হুদার আমলকেও ছাড়িয়ে গেছে। যেহেতু তিনি ঠিকাদার ছিলেন তাই অন্যান্য ঠিকাদার এবং প্রকৌশলীদের সঙ্গে আগে থেকেই তার দহরম মহরম, এমনকি কারো কারো সঙ্গে লেনদেনের সম্পর্কও। বিশেষ করে প্রকৌশলীরা, এমনকি জুনিয়র এবং মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীরাও সচিবালয়ে এসে তার রুমে ঢুকে পড়লে তিনি কাউকে না করতে পারেন না। ফলে দেখা যায় যতক্ষণ অফিসে থাকেন এদেরকে নিয়েই তার ব্যস্ত থাকতে হয়। মাঠ পর্যায়ের এই সব প্রকৌশলী সচিবালয়ে এসে ভিড় করায় এই মন্ত্রণালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্ম পর্যন্ত মারাত্মকভাবে বিঘি্নত হচ্ছে।
সাধারণত মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এখানে আসার কথা নয়। কিন্তু দেখা যায়, এদের প্রত্যেকেরই যোগাযোগমন্ত্রীর সাথে বিশেষ গোপন কাজকর্ম থাকে। যে কারণে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়। কোনোভাবেই এই তদবিরবাজদের ঠেকানো যাচ্ছে না। এদের উৎপাত বন্ধ করার জন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে একটি সার্কুলার পর্যন্ত জারি করতে হয়েছে। সচিবের সাক্ষর সম্বলিত এই সার্কুলারে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অধীনস্ত দপ্তর/সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ দাপ্তরিক প্রয়োজন ছাড়া সচিবালয়ে আগমন করেন। বিভিন্ন দপ্তর, অধিশাখা, শাখায় অযাচিত তদবিরের কারণে সরকারি কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
বর্ণিত অবস্থায় বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থা প্রধানের পূর্বানুমতি গ্রহণপূর্বক সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয়/শৃঙ্খলাজনিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, নাজমুল হুদা যোগাযোগ মন্ত্রী থাকার সময়ও তদবিরবাজদের উৎপাত অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। সেই সময় এদের ঠেকানোর জন্য এই একই কায়দায় একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছিল। এখন আবার এই সরকারের আমলেও সেই একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। যোগাযোগ মন্ত্রীর পূর্বপরিচয়ের জের ধরে আসা তদবিরবাজদের উৎপাত যে কতটা বেড়ে গেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় এই সার্কুলারটি জারি হতে দেখে। তবে এখন তিনি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি রেল ভবন ও মহাখালীস্থ সেতু বিভাগে বেশি বসেন ও সময় কাটান। সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের ইঞ্জিনিয়ারদের তদবির এবং কমিশন নিয়ে সরাসরি আলাপ সারেন এখন। 
আবুল হোসেনের কৌশল
আবুল হোসেনকে কমিশন না দিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে কোন কাজ পাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগেই বলা হয়েছে, নাজমুল হুদার অন্য কোন ব্যবসা না থাকার দরুন কমিশনই ছিল তার অন্যতম বাণিজ্য। কিন্তু আবুল হোসেনের নিজের ঠিকাদারি ব্যবসা থাকায় এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তো বটেই, অন্যদিকে ছোট-বড় অধিকাংশ কাজে কমিশন গ্রহণের মাধ্যমেও তিনি তার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। সৈয়দ আবুল হোসেন যেহেতু মন্ত্রী তাই তিনি সরাসরি নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে টেন্ডারে সাধারণত অংশ নেন না, সম্ভবও নয়। তিনি যে কোম্পানিকে টেন্ডার পাইয়ে দেবেন বলে চুক্তিবদ্ধ হন তাদের লোকাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন। এসব অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি নতুন একটি প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স করেন ভুয়া ঠিকানায়। যাতে তার অংশগ্রহণের কোন প্রমাণ না থাকে। 
এছাড়া তিনি নিজের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেবার ক্ষেত্রে আরো একটি বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করে থাকেন। যাতে কেউ ঢালাওভাবে তাকে কোন কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে দেখাতে না পারে। প্রতিটি কোম্পানির সাথে তিনি একবার মাত্র কাজ করে থাকেন। এর অন্যতম নজির হলো, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন ঢাকা-চট্রগ্রাম ৪ লেনের কাজে তিনি চীনা কোম্পানি সিনোহাইড্রো'র সাথে পার্টনারশিপে কাজ করছেন, অন্যত্র অর্থাৎ বিদ্যুৎ সেক্টরে ঘোড়াশাল পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্পে সিনোহাইড্রো অংশ নিলেও এই কোম্পানির সঙ্গে কাজ না করে বরং গোপনে এদের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি দিয়েছেন। এখানে তার সমঝোতা হয়েছে আরেকটি কোম্পানির সাথে। শুধু তাই নয়, সিনোহাইড্রো'র সঙ্গে তিনি যে ৪ লেন সড়কের কাজ করছেন সেই ক্ষেত্রেও সাকো'কে পার্টনার না করে ভুয়া ঠিকানার একটি নতুন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেছেন। এসব কৌশলের কারণে তাকে সরাসরি কোন একটি কোম্পানির সাথে গোপন সমঝোতা হয়েছে- এই অভিযোগটি করতে পারছিল না। কিন্তু এতকিছুর পরও তার এই কৌশলগুলোও এখন আর গোপন নেই। এভাবে নিজেরই মন্ত্রণালয়ে তিনি একাধারে ঠিকাদারি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কমিশনও খাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি নিশ্চিতভাবেই নাজমুল হুদাকে ছাড়িয়ে গেছেন। 
দুর্নীতিবাজরাই পছন্দের
যোগাযোগ মন্ত্রীর সবচেয়ে পছন্দের তালিকায় বরাবর দুর্নীতিবাজদেরকেই দেখা যাচ্ছে। যোগাযোগ খাতের যেসব চিহ্নিত এবং স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ রয়েছে- তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে বরং আরো সুবিধাজনক পোস্টিং দিয়ে নানাভাবে পুরস্কৃত করেছেন এবং তার পাশেই রেখেছেন। যেমন দুর্নীতি করার কথা স্বীকার করে সত্য ও জবাবদিহিতা কমিশনে (ট্রুুথ কমিশন) অর্থদ দেওয়া কর্মকর্তাদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর পদসহ শীর্ষস্থানীয় অন্তত পাঁচটি পদে বসানো হয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এক-এগারোর পর ঘুষের টাকা লেনদেনের সময় হাতেনাতে আটক কর্মকর্তাকে। রেলওয়ের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এমন একজনকে, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলা চলছে এবং আরো দুটি দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।
গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত এসব কর্মকর্তাকে বসানোর কারণে প্রতিষ্ঠানের অন্য কর্মকর্তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ কারণে কাজের গতি কমে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তাই। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ার পেছনেও এইসব পরিস্থিতি অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্টুথ কমিশনে স্বেচ্ছায় দুর্নীতির দায় স্বীকার করা, এমনকি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহাবুদ্দিনকে গত ২৭ জানুয়ারি সওজের প্রধান প্রকৌশলী করা হলে সবাই বিস্মিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তদন্তে শাহাবুদ্দিনসহ ৪১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঢাকা-বাইপাস সড়ক নির্মাণের কাজে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটি। কিন্তু এখন এরা মন্ত্রীর কল্যাণে শাস্তির বদলে সুবিধাজনক উচ্চ পদে বদলি ও পদোন্নতি নিয়ে পুরো বিভাগে জেঁকে বসেছেন।
শাহাবুদ্দিন ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে (এলপিআর) যান। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির মেয়াদ দুই বছর বাড়ালে তিনি পুনরায় যোগ দেন ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তবে তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ অবৈধ দাবি করে হাইকোর্টে রিট করেন বাহারউদ্দিন নামের এক মুক্তিযোদ্ধা। ওই মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় শাহাবুদ্দিনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এতকিছু বিতর্কিত বিষয় থাকা স্বত্ত্বেও এই দুর্নীতিবাজের পক্ষে মন্ত্রীর অবস্থান অবাক করেছে সকলকে।
এছাড়া স্বেচ্ছায় দুর্নীতির কথা স্বীকার করা আবদুল আজিম জোয়ার্দারকে মন্ত্রী অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী করে সওজের প্রশাসন ও সংস্থাপন বিভাগের দায়িত্ব দিয়েছেন। আরেক কর্মকর্তা সোহরাব উদ্দিন মিয়াকেও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর পদমর্যাদায় বেশ কয়েকটি সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সংক্রান্ত প্রকল্পের পরিচালক করা হয়েছে। এভাবে দেখা গেছে, এই মন্ত্রণালয়ের যতগুলো বিভাগ আছে এর প্রায় সবগুলোর শীর্ষ পদেই বসানো হয়েছে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের। অবাক ব্যাপার হলো, এইসব দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী, যারা জোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার অতি পছন্দের ছিলেন, তার অনিয়ম-দুর্নীতিতে সরাসরি সহযোগিতা করেছেন এরা মহাজোট সরকারের মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনেরও অতি পছন্দের। জোট সরকারের ৫ বছরের সাড়ে ৪ বছর যিনি নাজমুল হুদার এলাকা মুন্সিগঞ্জ সার্কেলের নির্বাহি প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেছেন সেই হুদার সেই প্রিয় ব্যক্তি আরিফুর রহমান জিন্নাহকে বর্তমান মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ঢাকা-চট্টগ্রাম ৪ লেন সড়কের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছেন। জিন্নাহকে অতীত দুর্নীতির কারণে বর্তমান সরকারের আমলে প্রথমে ঢাকার বাইরে বদলি করা হলেও সেখানে তিনি যাননি। মন্ত্রী আবুল হোসেন সরাসরি হস্তক্ষেপ করে তাকে আবার ঢাকায় নিয়ে আসেন। 
সংসদীয় কমিটিও পারছে না
যোগাযোগ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংসদীয় কমিটিরও যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তারাও কিছুই করতে পারছে না। সংসদীয় কমিটির কোনো সুপারিশ-উপদেশেরই তোয়াক্কা করছেন না মন্ত্রী। ৯ম জাতীয় সংসদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির প্রকাশিত প্রথম রিপোর্টে দেখা যায় কমিটি শুরু থেকেই এই মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম, অসংগতি এবং দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে। কিন্তু যোগাযোগ মন্ত্রী এসব কিছুই মানেননি। তিনি বরাবর নিজের মতো করেই অনিয়ম এবং দুর্নীতির রাস্তায় হেঁটে গেছেন। এমনকি সংসদীয় কমিটির তদন্তের প্রস্তাবে দেখা গেছে তিনি নিজেরই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দায় সেরেছেন। তার অধীনে কর্মরত কর্মকর্তাদের পক্ষে তার দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরা কিভাবে সম্ভব তা সচেতন মানুষ মাত্রই বোঝেন। কিন্তু এভাবেই মন্ত্রী সংসদীয় কমিটি কর্তৃক তদন্তের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে সত্য গোপন করার চেষ্টা করেছেন। 
আর এভাবেই বাংলাদেশ রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত ডিজি তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী (টিএ চৌধুরী) এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিনের মতো আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজদের সংসদীয় তদন্তের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন যোগাযোগ মন্ত্রী। 
২০ অক্টোবরে এক বৈঠকে সংসদীয় কমিটির সদস্যরা রেলওয়ের টিএ চৌধুরী ও সওজ বিভাগের শাহাবুদ্দিনের নিয়োগের এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। আলোচনায় কোনোভাবেই এই সব গুরুত্বপূর্ণ পদে এরকম ব্যক্তিরা নিয়োগ পেতে পারেন না এই সিদ্ধান্তে আসেন সদস্যরা। এরপর এ বিষয়টির তদন্তে সংসদীয় উপ-কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। আর তখনই এতে বাদ সাধেন মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি ওই তদন্ত কমিটি গঠন না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন- "সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে প্রকাশিত দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত যোগাযোগ মন্ত্রণালয় করবে।" এ অবস্থায় কমিটির অধিকাংশ সদস্যের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হলেও মন্ত্রীর আশ্বাসকেই মেনে নেন তারা। 
কিন্তু এ ধরনের তদন্তের মাধ্যমে কোন সত্যটি বেরিয়ে আসবে, তা সবাই জানে। আসলে এই দুর্নীতিবাজদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়েই তিনি সংসদীয় উপ-কমিটি গঠনের বিরোধিতা করেন। মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে তদন্তের কথা বলে বাঁচিয়ে দেন এই দুর্নীতিবাজদের।
চাঁদাবাজির পক্ষে
যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান কমিটির এক বৈঠকে অভিযোগ করেন, সড়ক পরিবহন খাতে মালিক ও শ্রমিক সমিতির নামে চাঁদাবাজির বৈধতা দেয়ার পক্ষে কাজ করছেন মন্ত্রী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে এক অনির্ধারিত সভায় সড়ক পরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে বৈধতা দেয়া হয়। ওই সভায় বাস টার্মিনাল থেকে শ্রমিক ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের মাধ্যমে বাস প্রতি ৭০ টাকা চাঁদা আদায় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ও তার দখলে
বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ে এমন বহু ঘটনা আছে যার মাধ্যমে প্রমাণ পাওয়া যায় যে এই মন্ত্রণালয়টিও তারই দখলে রয়েছে। তার কারণে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ এগুতেই পারছে না। এখানে তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য তিনি দু'বার দরপত্র বাতিলের ব্যবস্থা করেন। সর্বশেষ সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। এমনই তার প্রভাব। ঘোড়াশাল ২০০-৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাস টারবাইন পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হলো জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল ট্যাকনিকেল ইমপোর্ট এন্ড এঙ্পোর্ট কর্পোরেশন (সিএনটিআইসি) ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এন্ড এঙ্পোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি)। অনেক জালিয়াতি-দুর্নীতির মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত এই কোম্পানির দরপত্রই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখানে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবকেও মানা হয়নি। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো সার-সংক্ষেপে জয়েন্ট ভেঞ্চার এ কোম্পানির দরপ্রস্তাবকে নন-রেসপন্সিভ এবং এই দর প্রক্রিয়া বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছিল। অথচ যোগাযোগমন্ত্রীর স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবকেও পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এছাড়া বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে তার প্রভাবের আরো বেশকিছু নজির তিনি ইতিমধ্যে দেখিয়ে দিয়েছেন। যেমন সিলেটে দেড়শ' মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ সংক্রান্ত প্রস্তাব জোর করে তিনি আদায় করে নিয়েছেন। মেঘনাঘাট-আমিনবাজার বিদ্যুতের বৃহৎ ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ প্রকল্পেও তার শেয়ার রয়েছে। মোটকথা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো বিদ্যুতেরও সবকিছু তারই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বেসরকারি বাস মালিকদের পক্ষাবলম্বন
ঢাকা শহরের তীব্র যানজটে সাধারণ মানুষ কিভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করে তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্যদের বোঝার কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা মহানগরের জন্য ১০০টি নতুন বিআরটিসি বাসের উদ্বোধন করে সেই সমস্যার সমাধানের পথে এগিয়ে গেলেও- যোগাযোগ মন্ত্রীর কারণে সেই সুবিধা থেকে মানুষ অনেকটাই বঞ্চিত হচ্ছে। বেসরকারি মালিকদের চাপে এই সব বাসের অধিকাংশ রুটই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, শুধু ঢাকা শহরেই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও এভাবে বেসরকারি বাস মালিকদের কাছে নতিস্বীকার করা হয়েছে। 
বিআরটিসি'র বাস সার্ভিসকে অজনপ্রিয় করার জন্য বেশকিছু কৌশল নেয়া হয়। যেমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এই সব বাসকে থামানোর অনুমতি দেয়া হয় না। যে কারণে এগুলো শেষ পর্যন্ত আর চালানো যায় না। বন্ধ করে দিতে হয়। ঢাকার বাইরে উপজেলা সদরে ওঠানো_নামানো না গেলে বিআরটিসির যাত্রী কমে যায়। তাতে আপনা-আপনিই বাস সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এর আগেও বিভিন্ন জেলায় এভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করায় বিআরটিসির বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বর্তমান সরকারের আমলে এবার সেই একই পুরনো কৌশল নেয়া হয়েছে। মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিআরটিসির বাস কোনো উপজেলা সদরেও থামতে পারবে না। বিআরটিসির বাস থামবে শুধুমাত্র জেলা শহরে। এভাবেই তিনি সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ভূমিকায় নেমেছেন। নাজমুল হুদাও বেসরকারি বাস মালিকদের চাপে বিআরটিসিকে বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। রাজশাহী থেকে মানুষজন ঢাকায় যেন ট্রেনে না আসতে পারে, সেজন্য বাস মালিকদের চাপে রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশে একটি মেইল ট্রেনের সময় নাজমুল হুদা ঠিক করে দিয়েছিলেন রাত ৩টায়। রাজশাহীতে যারা গেছেন তারা দেখেছেন রাজশাহী রেল স্টেশনের ঠিক পাশেই রাজশাহী_ঢাকা বড় সড়কটির ওপরেই হচ্ছে বাস কাউন্টারগুলো। এখান থেকেই দূরপাল্লার সবগুলো বাস ছাড়ে।
সকাল ৭টা_৮টার দিকে ঢাকাগামী বাস পাওয়া গেলে রাত ৩টায় রাজশাহী_ঢাকা মেইলট্রেনে ভ্রমণ করার জন্য কে রাত ২টায় ঘুম থেকে উঠবে? সুতরাং প্রাইভেট বাস মালিকদের বিজয় এবং সাধারণ মানুষের পরাজয়, এমনটিই ঘটালেন বিএনপি সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী। কিন্তু ঠিক একই রকমের কাজ করলেন আওয়ামী লীগের এই মন্ত্রীও, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।
বিআরটিসি তুলনামুলকভাবে কম খরচে যাত্রীদের উন্নতমানের সেবা দিয়ে থাকে। তাছাড়া তাদের জবাবদিহিতা আছে। কোনো চালক বা 'হেলপার' অসদাচরণ করলে বা ভাড়া বেশি নিলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যায়। প্রাইভেট বাস মালিকদের এসবের বালাই নেই। বাসযাত্রীদের কাছে তারা কোনোভাবেই দায়বদ্ধ নয়। তাদের ইচ্ছা-ই আইন, তাদের হুমকিই বিধান। অথচ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এই দিকগুলো বিবেচনা না করে নিজের স্বার্থে বেসরকারি বাস মালিকদের মাধ্যমে বড় অংকের টাকায় ম্যানেজ হয়ে আত্মসমর্পণ করলেন তাদের কাছে।
উন্নয়ন কাজে ব্যর্থতা
সংসদে যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে খোদ সরকারি দল থেকেই। গত মাসে সরকারি দলের অভিজ্ঞ সদস্য তোফায়েল আহমেদ সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রীকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, গত দুই বছরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে কাজের কাজ কিছু হয়নি। সারা দেশে রাস্তাঘাট সব ভেঙে আছে, কোনো সংস্কার নেই। দুই বছর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম রাস্তা চার লেনে উন্নীত করার দরপত্র হলেও কোনো কাজ এখনো শুরু হয়নি। অনেক সময় পার হয়ে গেলেও পদ্মা সেতুরও কোনো খবর নেই। পদ্মা সেতু ও এলিভেটেড রেলওয়ের ব্যাপারে যোগাযোগমন্ত্রীর সদিচ্ছা আছে কি না, সন্দেহ।
ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, গত উপনির্বাচনের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়ে ভাঙা রাস্তাঘাটের বেহাল দশা দেখে এসেছি। রাস্তার এমনই দুর্দশা যে ৪০ মাইল ঘুরে ঢাকায় ফিরতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সারা দেশে কোথাও গত দুই বছরে রাস্তাঘাটের কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। রাস্তাঘাটের এ বেহাল দশা দেখে একজন আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে মন খুবই খারাপ হয়েছে। তিনি এসব বিষয়ে মন্ত্রীর জবাব চাইলে সংসদে উপস্থিত বেশির ভাগ সাংসদ টেবিল চাপড়ে তাকে সমর্থন জানান। এই টেবিল চাপড়ানোর ঘটনায় প্রমাণিত হয়, আবুল হোসেনের নানান অপকর্মে তার দলের অধিকাংশ সদস্যই ক্ষুব্ধ। 
আবুল হোসেন এমনকি তার নিজের এলাকায় পর্যন্ত কোনো উন্নয়ন কাজ দেখাতে পারেননি। ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রত্যেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেখানে আ'লীগের প্রার্থী হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেন নির্বাচিত হলেও তার এলাকাবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারেননি। মহাজোট সরকারের ২ বছরের মূল্যায়নেও সারা দেশ দূরে থাক, এমনকি তার নির্বাচনী এলাকা কালকিনিতেও তিনি উন্নয়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন বলে সাধারণ মানুষের মুখে শোনা যায়। তবে তিনি সফল হয়েছেন নিজের নাম প্রচারের কাজ সমপ্রসারণে। উপজেলা আ'লীগের ব্যানারে গত বছর নিজেই কোটি টাকা ব্যয় করে সংবর্ধনা নিতে এসে সারা দেশে আলোচিত হয়েছিলেন। তারপরও ক্ষান্ত দেননি। মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের মধ্যে তিনি হাজার হাজার গাছের চারার সাথে কয়েক গুণ টাকা বেশি ব্যয় করে নিজের নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড বিতরণ করেছেন। জনবহুল স্থানের প্রতিষ্ঠানগুলোতে তার গাছের চারাসহ সাইনবোর্ড পুঁতে রাখা হয়েছে। আর সেখানে গাছের চারা না থাকলেও নামের সাইনবোর্ডগুলো ঠিকই রয়ে গেছে। ঈদুল ফিতরের সময় দারিদ্র মানুষের মাঝে তিনি গেঞ্জি বিতরণ করেছেন। কিন্তু সেখানেও তিনি তার নামই প্রচার করেছেন। প্রত্যেকটি গেঞ্জির মূল্য অল্প কিছু টাকা হলেও সেখানে তিনি তার নাম ও ছবি দিয়ে দিয়েছেন। নাম ও ছবি সংবলিত গেঞ্জি সেখানকার হাটবাজারগুলোতে এখনো দেখা যায়। এভাবে তার জনসেবার চেয়ে নাম প্রচারের কাজটিই বেশি হয়ে থাকে।
দেখা গেছে, মন্ত্রী নিজের আখের গোছাতে পুরোপুরি সফল হলেও তার দায়িত্ব পালনে সর্বতোভাবেই ব্যর্থ হয়েছেন। তার কারণেই পদ্মা সেতুর টাকা জাপান ফেরত যাবার উপক্রম হয়েছিল। যে টাকা উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীকেই আবার সে দেশে ছুটতে হয়েছিল।
ঘুষ না দেয়ায়
দু'বছর আটকে রেখে অবশেষে টেন্ডার বাতিল
সৈয়দ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে এখন ঘুষের কতটা মহোৎসব চলছে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এটি। ঘুষের কারণে পটুয়াখালী জেলার অধীনে পটুয়াখালী-খুলনা মহাসড়কের হাজিপুর ব্রীজের নির্মাণ কাজ দু'বছর আটকে থাকে। অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার জন্য তারা শুরু থেকেই নানা টালবাহানা, ছল-চাতুরী শুরু করেছিল। এজন্য যোগ্য ও সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের দরপত্র কোনো কারণ ছাড়াই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেয়া হয়। এ দুর্নীতিবাজ চক্র শুধু টেন্ডার প্রক্রিয়া আটকে রেখেই ক্ষান্ত হয়নি। উদ্দেশ্য সফল না হওয়ায় অবশেষে তারা পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছে। 
৪৮২ মিটার দীর্ঘ এ ব্রিজ নির্মাণের জন্য ২০০৯ সালের ৯ এপ্রিল টেন্ডার আহ্বান করে বরিশাল সড়ক বিভাগ। এ প্রকল্পের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩৯ কোটি টাকা। মোট ৬টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। এরমধ্যে এমইউ (বাসি)-এমএএইচ (জেভি) নামক প্রতিষ্ঠানটি যোগ্য এবং সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়া সত্ত্বেও কোনো কারণ ছাড়াই এ প্রতিষ্ঠানটির দরপত্র মূল্যায়ন থেকে বাদ রাখা হয়। প্রথমে এ কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেবার কথা বলে প্রতিষ্ঠানটির কাছে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটি চাহিদামতো ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় তার দরপত্র আমলে নেয়া হয়নি।
অযৌক্তিভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ায় এমইউ (বাসি)-এমএএইচ (জেভি) অভিযোগ করে সিপিটিইউ'র কাছে। সিপিটিইউ'র মতামতে এ কোম্পানির দরপত্র পুনঃমূল্যায়নের কথা বলা হয়। দরপত্র পুনঃমূল্যায়নের উদ্যোগও নেয়া হয়। কিন্তু এর বিনিময়ে ঘুষ দাবি করা হয়। দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখার পর অবশেষে দরপত্র বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। 
মন্ত্রীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বঙ্গবন্ধু সেতু মেরামতের কাজ দিতে গিয়ে
বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ করেছে হুন্দাই ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। তাদের নকশা ত্রুটির কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নকশা ত্রুটির কারণে ফাটল সৃষ্টি হওয়ার ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা হুন্দাই কোম্পানির। কিন্তু হুন্দাইয়ের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় না করে গত বছর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে বঙ্গবন্ধু সেতুর ফাটল মেরামতের জন্য যোগাযোগ মন্ত্রীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানি চায়না রোড এন্ড ব্রিজ করপোরেশনের দরপত্র অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। অথচ কোম্পানিটি কালো তালিকাভুক্ত। এই বিষয়টি ক্রয় কমিটিতে পাঠানো সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়নি। যোগযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের গোপন পরামর্শেই এই তথ্য জালিয়াতি করা হয়েছে। এ নিয়ে ক্রয় কমিটিতে অভিযোগ উত্থাপিত হলে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্তে তাদের এই তথ্য জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। ক্রয় কমিটি ওই দরপ্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে দরপত্র আহ্বানের মতামত দেয়। 
নকশা ত্রুটির কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুতে সৃষ্ট ফাটলের জন্য ঠিকাদারি কোম্পানি হুন্দাই ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড-এর বিরুদ্ধে মানিস্যুট মামলা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় মতামতও দিয়েছিল । কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি। মামলা থেকে বিরত থাকার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে হুন্দাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও সেতু কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তার গোপন সমঝোতা হয়। সরকারের স্বার্থবিরোধী এই কর্মকা-ের সঙ্গে যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনও যুক্ত হন। স্বয়ং মন্ত্রীই এখন হুন্দাই ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড-এর বিরুদ্ধে মামলার পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করছেন। 
জনসংযোগ কর্মকর্তা বদলালেন যে কারণে
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র তথ্য অফিসার বা জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন এএফএম আমিনুল ইসলাম। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করে একদিন দেখেন তিনি আর এখানে নেই। তাকে তথ্য অধিদফত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন