পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১১

ভারত-বাংলাদশে যৌথ ঘোষণার কিছু উল্লখেযোগ্য অনুচ্ছেদ


শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে বেশ হইচই হচ্ছে চারদিকে। এবং ব্লগেও। শেখ হাসিনাকে ১০০ ভাগ সফল সফর উপলক্ষে জাম্পেশ সম্বর্ধনা দেয়া হলো। সংবাদ সম্মেলন করে তিনি দেশবাসীকে জানালেন- কি বিশাল অর্জন নিয়ে এসেছেন তিনি দেশের জন্যে, বলতে গেলে অসাধ্য সাধন করেছেন, আর খালেদা জিয়া যে ভারত সফরে খালি অশ্ব ডিম্ব পেড়ে এসেছিলেন সাথে সেটাও মনে করে দিতে ভুলেননি। খালেদা জিয়াও চুপ করে থাকার পাত্র নন, তিনিও সংবাদ সম্মেলন করে জানান দেন- শেখ হাসিনার ভারত সফর ১০০ ভাগ বিফল, বলতে গেলে তিনি ভারতের কাছে দেশটাকেই বিকিয়ে দিয়ে এসেছেন। কিন্তু মজার বিষয় দেখা গেলো- তিনিও যৌথ ঘোষণার বিভিন্ন ধারা, চুক্তিগুলো নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বললেন না, তিনি ব্যস্ত থাকলেন- শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের কথাগুলোর জবাব দেয়া নিয়েই। এবং জোরের সাথেই জানালেন- এইবারে হাসিনা দেশটারে ভারতের কাছে বিকিয়েই এসেছেন!

আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা এমন দেশে এমন পরিমন্ডলে বাস করি যে- আমাদের রাজনৈতিক চেতনা, বক্তব্য সবই এই বড় দুই দল তৈরি করে দেয়। যথারীতি গোটা দেশ এবং এই ব্লগ ও অন্যান্য ব্লগ মাধ্যমগুলোও দুভাগে বিভক্ত। ১০০ ভাগ সফল বনাম ১০০ ভাগ বিফল, দেশের বিশাল কিছু পাওয়া বনাম দেশ বিক্রি, এই পাল্টাপাল্টিই চারদিকে দেখছি, ভারতের দালাল কিম্বা ভারত বিদ্বেষী - এই দুই ট্যাগিং এর বাইরে থাকাটা এখানে প্রায় অসম্ভব! হাসিনা-খালেদা, আওয়ামিলীগ-বিএনপি এই বিভক্তি যে আর কতদিন আমাদের ভোগাবে কে জানে? 

যাহোক, শুরুর এই কথাকটি কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলা, বিরক্তিটুকু পাশে সরিয়ে রেখে- আমরা আলোচনা করতে চাইছি। (বিরক্তির কারণ: আজ এক বন্ধুর অভিযোগ শুনলাম- ভারত সফরের চুক্তি/যৌথ ইশতেহার এগুলোর বিরোধিতা করে নাকি আমরা বিএনপি'র হাতরে শক্ত করছি!!!!)

যৌথ ঘোষণা/ইশতিহারের ৫০ টি অনুচ্ছেদ/ধারার অধিকাংশ (প্রথম ১৫-১৬ টি বাদে, এগুলো মূলত স্মৃতিচারন, আনুষ্ঠানিকতা আর সৌহার্দ বিনিময় সংক্রান্ত) নিয়েই অনেক আলোচনা করার আছে, সে চেষ্টা আমরা পর্যায়ক্রমে করবো। কিন্তু প্রথমেই যে কাজটি জরুরি মনে করছি- সেটা হচ্ছে, যৌথ ইশতেহারটিকেই সকলের কাছে নিয়ে যাওয়া। বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা, তর্ক-বিতর্কে মনে হয়েছে- অনেকেই ধারাগুলো ভালো করে না পড়েই- দুই নেত্রীর পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য ও পত্রপত্রিকার কিছু রিপোর্টের উপর নির্ভর করে, নিজ নিজ অবস্থান নিয়েছেন। সে কারণেই আমরা এই পর্বে- ৫০ টি ধারার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ধারাগুলো অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি। আমাদের বক্তব্য তথা বিশ্লেষন গুলো নিয়ে আগামিতে হাজির হওয়ার চেষ্টা করবো।

ভারত-বাংলাদশে যৌথ ঘোষণার কিছু উল্লখেযোগ্য অনুচ্ছেদ
১৭. উভয় প্রধানমন্ত্রী সব ধরণের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। তাঁরা মনে করেন উভয় দেশের জন্যই নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু সন্ত্রাসী, বিদ্রোহী আর অপরাধীরা কোন রাষ্ট্রীয় সীমানা মানে না । তাঁরা নিরাপত্তা ইস্যুতে উভয় দেশের পারস্পরিক সক্রিয় সহায়তার প্রয়োজনের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। উভয় নেতা তাদের রাষ্ট্রীয় সীমানায় পরস্পরের জন্য ক্ষতিকর কর্মকান্ডের অনুমোদন না দেয়ার নিশ্চায়তা পূনর্ব্যক্ত করেছেন এবং স্ব স্ব রাষ্ট্রীয় সীমানায় স্থানীয় কিংবা বিদেশী সন্ত্রাসী/জঙ্গী এবং বিদ্রোহী সংগঠন ও তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ, আশ্রয় কিংবা অন্য কোন সহায়তা প্রদান না করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

১৮. ডিসেম্বর ২০০৯ এ অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের সংলাপকে স্বাগত জানিয়ে উভয় প্রধানমন্ত্রী স্ব স্ব মন্ত্রণালয়কে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করবার এবং উক্ত সংলাপে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোকে বাস্তবায়ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আন্ত:সীমান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে উভয় প্রধানমন্ত্রী সীমান্তের অবৈধ কর্মকান্ড এবং প্রাণহানি রোধ করার জন্য উভয় দেশের সীমানা রক্ষী বাহিনীরই শক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংযত আচরণ করা এবং তাদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক আয়োজনের ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।

১৯. বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দহগ্রাম আঙ্গুরপোতায় বিদ্যুতের ব্যাবস্থা করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং পূর্বের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিন বিঘা করিডোরে কেবল ভারতের ব্যাবহারের জন্য একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

২০. উভয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তির আলোকে অমীমাংসিত স্থল সীমানা সমস্যার সামগ্রিক সমাধানের ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। এই প্রেক্ষিতে প্রকৃয়াটিকে সামনে এগিয়ে নিতে একটি যৌথ সীমানা দল বা জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয়ে একমত হয়েছেন।

২১. উভয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্রসীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তারা জাতিসংঘের সমুদ্র আইন(আনক্লস) এর পরিশিষ্ট ৭ মোতাবেক কার্যক্রম শুরু করার বিষয়টি তুলে ধরেন। আর এই প্রেক্ষিতে ভারতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

২২. বাংলাদেশের আশুগঞ্জ এবং ভারতের শিলঘাট কে "পোর্ট অব কল" ঘোষণা করা হবে। পত্রবিনিময়ের মাধ্যমে আইডব্লিউটিটি প্রটোকল বা অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন ট্রানজিট প্রটোকলে প্রয়োজনীয় সংযোজন করা হবে। একটি যৌথ টিম আশুগঞ্জ থেকে ওভার ডাইমেনশনাল কার্গো বা ওডিসি’র এককালিন বা দীর্ঘমেয়াদি পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন ও তার খরচ যাচাই করবে। উভয় সরকারই এর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছে। উভয় দেশের কণ্ট্রাক্টরই এই কাজের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে।

২৩. বাংলাদেশ তার সড়ক ও রেলপথে পণ্য আনা-নেয়ার মাধ্যমে ভারতকে মংলা ও চট্ট্রগ্রাম বন্দর ব্যবহার করার অনুমোদন দিতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটানকেও মংলা এবং চট্রগ্রাম বন্দর ব্যাবহার করতে দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে।

২৪. প্রস্তাবিত আখাউড়া-আগরতলা রেলওয়ে সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করা হবে ভারতের অনুদান থেকে। উভয় দেশের রেলকর্তৃপক্ষের একটি যৌথদল সংযোগ পথটি নির্ধারণ করবে। 

২৫. তারা ঢাকা ও কলতার মধ্যে "মৈত্রি এক্সপ্রেস" এর চালাচলকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং উভয়দেশের মধ্যে পুনরায় রেল ও সড়ক যোগাযোগ চালু করবার আহবান জানিয়েছেন।

২৬. উভয়দেশের প্রধানমন্ত্রী নেপালের সাথে ট্রানজিটের জন্য রোহানপুর-সিঙ্গাবাদ ব্রডগেজ রেললাইনকে ব্যাবহারে সম্মত হয়েছেন। বাংলাদেশ রাধিকাপুর-বিরল রেললাইন ব্রডগেজে রূপান্তরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং সেই সাথে ভূটানের সাথে রেলওয়ে ট্রানজিটের অনুরোধ জানিয়েছে।

২৭. শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানি সংকটের জন্য উভয়দেশের জনগণের কষ্টের কথা উল্লেখ করে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তার পানি বন্টনের আলোচনা দ্রুত সমাধানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী স্ব স্ব দেশের পানি সম্পদ মন্ত্রীকে ২০১০ সালের প্রথম কোয়ার্টারেই যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আয়োজন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যৌথ নদী কমিশন তিস্তা ছাড়াও ফেনী, মানু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতি, ধরলা এবং দুধকুমার সম্পর্কিত বিভিন্ন ইস্যু নিয়েও আলোচনা করবে।

২৮. এছাড়াও তার নিম্নোক্ত কার্যক্রমগুলো হাতে নেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন-
ক) ইছামতি নদী ড্রেজিং
খ) মহানন্দা, করোতোয়া, নাগর, কুলিক, আত্রাই, ধরলা এবং ফেনী নদী রক্ষা কার্যক্রম

২৯. ভারতের প্রধানমন্ত্রী বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নৌচলাচল এবং বন্দরের নব্যতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামতো নদী খনন বা ড্রেজিং কার্যক্রমে সহায়তা করতে রাজি হয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে ভারত জরুরী ভিত্তিতে বাংলাদেশকে অন্যান্য সহায়তা ছাড়াও কিছু ড্রেজার প্রদান করতে রাজি হয়েছে। বাংলাদেশ ৯ টি ড্রেজারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে।

৩০. ভারতীয় প্রধামন্ত্রী টিপাইমুখ প্রকল্পে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কোন পদক্ষেপ না নেয়ার আশ্বাস পূনর্ব্যক্ত করেছেন।

৩১. ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় গ্রিড থেকে বাংলাদেশকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবারাহ করতে সম্মত হয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে উভয়দেশের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যকার আন্ত:গ্রিড সংযোগ ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা আরও সম্মত হয়েছেন যে উভয় দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় দেশকে সহায়তা করবে, যার মধ্যে নবায়ণ যোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টিও রয়েছে। এই উদ্দেশ্যে যৌথ প্রকল্প ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানও স্থাপন করা যেতে পারে বলে তারা একমত হয়েছেন।

৩২. বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানীকে উৎসাহিত করার জন্য উভয় দেশ শুল্ক ও অ-শুল্ক বাধা দূরীকরণ, বন্দর সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া এবং রেল ও জলপথে কনটেইনার কার্গো চলাচলের সুবিধা প্রধানের বিষয়গুলো মিমাংসা করতে সম্মত হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ সার্ক এলডিসি ভুক্ত দেশগুলোর পণ্যসমুহকে ভারতের বাজারে শুল্ক-মুক্ত প্রবেশের সুবিধা প্রদানের ভারতীয় সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের স্বার্থের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর পণ্যের তালিকা ছোট করার ভারতীয় সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এ তালিকা আরও ছোট করার আহবান জানিয়েছে।

৩৩. ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ষ্ট্রান্ডার্ড টেস্টিং ইন্সিটিটিউট বা বিএসটিআই এর দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এর মানোন্নয়নে সহায়তা দিতে রাজী হয়েছেন। 

৩৪. প্রধানমন্ত্রীদ্বয় উভয় দেশের মধ্যে বিনিয়োগ, যৌথ বিনিয়োগ ও জয়েন্ট ভেঞ্চারকে উৎসাহিত করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। উভয় দেশে বেসরকারী খাতের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পারস্পরিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলেও তারা একমত হয়েছেন।

৩৫. প্রধানমন্ত্রীগণ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং দিক নির্দেশনা সহকারে সাবরুম-রামগড় এবং ডিমাগিরি-থেগামুখ স্থলসীমান্ত বন্দর চালু করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। তাছাড়া বর্তমান স্থল-সীমান্ত বন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারেও ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩৬. উভয় সরকারের মতামত এবং নির্দেশনা অনুযায়ী পণ্য বেচাকেনার জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে মেঘালয় সীমান্ত সহ বেশ কিছু সীমান্ত এলাকায় সীমান্ত হাট স্থাপন করার ব্যাপারেও ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩৭. নেপাল ও ভুটানের ট্রাক বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি স্থল শুল্ক বন্দরে বাংলাবান্ধার ভিতরে জিরো পয়েন্টের ২০০ মিটার পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারবে। উভয় দেশের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা করা হবে ।

৩৮. ভারতের প্রধান মন্ত্রী বাংলাদেশকে রেলওয়ে অবকাঠামো, রেল ইঞ্জিন ও বগি, সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপের উন্নয়ন, আর্টিকুলেট বাস সহ বিভিন্ন বাস ক্রয় এবং ড্রেজিং প্রকল্প সহ বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাবহার করার জন্য ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন।

৩৯. ঢাকায় ফ্লাই ওভার সহ বিভিন্ন সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ভারতের সহায়তা চেয়েছে। ভারত বিষয়টি বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে।

৪০. কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি উভয় দেশের যৌথ দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রীগণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তা ও দর্শনের সাথে সামঞ্জ্যস্য রেখে তাঁর আসন্ন ১৫০তম জন্মবার্ষিকী পালনের ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেন।

৪১. ভারত সরকার প্রতিবছর ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বাংলাদেশের পণ্ডিতব্যাক্তিবর্গ এবং সরকারী চাকুরেদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়েনের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদী ৩০০ টি বৃত্তি প্রদান করবে। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এ সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে।

৪২. উভয় প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক সহযোগীতার জন্য সার্কের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। উভয় নেতা সার্ককে একটি কার্যকর ও ফলপ্রসু সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন যার মাধ্যমে কার্যকর উদ্যোগ, যৌথ কর্মপ্রচেষ্টা এবং পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে পুরো অঞ্চলকেই পুনরুজ্জীবিত করে তোলা যাবে।

৪৩. উভয় নেতা আঞ্চলিক সহযোগীতা শক্তিশালী করতে বিমসটেকের আওতায় নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের কাছে বাংলাদেশ ঢাকায় বিমসটেকের একটি সবিবালয় স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভারত বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে।

৪৪. দুই প্রধানমন্ত্রী ডিসেম্বর ২০০৯ এ কোপেনহেগেন এ অনুষ্ঠিত জলবায়ু সন্মেলনে নেয়া উদ্যোগ সমূহকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তন হলো এই মূহূর্তে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি চ্যালেঞ্জ। তাঁরা ইউনাইটেড ন্যাশেনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশান অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা ইউএনএফসিসি’র বিধি-বিধান এবং নীতিমালার প্রতি তাদের আস্থা পূনর্ব্যক্ত করেছেন যার মাঝে প্রত্যেক দেশের জন্য সাধারণ কিন্তু সামর্থ ও দায়দ্বায়িত্ব অনুসারে বিশেষায়িত বিধান ও নীতিমালাও অন্তর্ভূক্ত । তারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ বিশেষত স্বল্পোন্নত দেশ(এলডিসি), ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র সমূহ (এসআইডিএস) এবং আফ্রিকার প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে এই আইনটির পূর্ণ, কার্যকর ও টেকসই বাস্তবায়নের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন।

৪৫. তারা দারিদ্র বিমোচন এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে এই শতাব্দির দুটো বড়ো চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্রিত করেছেন। তারা একমত পোষণ করেন যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এ ব্যাপারে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহন করা। তারা বিশেষত কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য পল্লী উন্নয়ন নীতিমালা, প্রযুক্তি বিনিময় ইত্যাদির ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন।

৪৬. প্রধানমন্ত্রীগণ বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে জাতিসংঘকে কেন্দ্রকরে একটি কার্যকর বহুপাক্ষিক ব্যাবস্থার গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরেন করেন। এই প্রেক্ষিতে তারা জাতিসংঘকে আরো প্রতিনিধিত্বশীল, দ্বায়িত্ববান ও কার্যকর করে তুলবার জন্য জাতিসংঘ ও তার নিরাপত্তা পরিষদ এবং বিশেষত: এর কার্যপ্রণালীর জরুরী পুনর্গঠনের ব্যাপারে জোর দেন। তাঁরা এই পুনর্গঠনের কাজে ছোট ছোট দেশগুলোর অংশগ্রহন নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।

৪৭. ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যখন পুনর্গঠন হবে তখন ভারতকে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পদের প্রার্থিতার প্রতি সমর্থনদানের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন। ২০১১-১২ সালের মেয়াদে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদে ভারতকে সমর্থন দেয়ার কথা বাংলাদেশ জানিয়েছে। ভারতও ২০১৬-১৭ মেয়াদে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদের বাংলাদেশের প্রার্থিতাকে সমর্থন দেয়ার কথা জানিয়েছে।

৪৮. দুই প্রধানমন্ত্রী নিম্নলিখিত চুক্তিসমূহ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন-
ক) অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা প্রদান
খ) সাজাপ্রাপ্ত ব্যাক্তিদের হস্তান্তর 
গ) আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, সংঘবদ্ধ অপরাধ ও মাদকপাচার মোকাবেলা
ঘ) বিদ্যুত খাতে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক
ঙ) সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম।
ঋণ এবং উন্নয়নের জন্য সমন্বিত সহযোগিতা কাঠামো যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয় সে ক্ষেত্রে দুই প্রধানমন্ত্রী একমত পোষণ করেছেন।


পরিশিষ্ট ১: 
১। পি মুন্সী ইশতেহারটি নিয়ে তিন পর্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ লিখেছেন- সম্ভবত আরেকটি পর্ব সামনে আরো লিখবেন। ( Click This Link Click This Link Click This Link)
২। ফকির ইলিয়াসের হাসিনা বনাম খালেদা টাইপের পোস্টের ( Click This Link) জবাবে আহসান হাবিব শিমুলের এই পোস্ট ( Click This Link) পড়া যেতে পারে।
৩। সচলায়তনে হিমুর এই পোস্টের কমেন্টে (http://www.sachalayatan.com/himu/29791) আহসান হাবিব শিমুল কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছে।
৪। সচলায়তনে সাঈদ আহমেদের এই পোস্টের কমেন্টে (http://www.sachalayatan.com/syeed_ahamed/29794) আমরা (কল্লোল) কিছু আলোচনা করেছি।

পরিশিষ্ট ২:
শেখ হাসিনার ভারত সফরের সম্পাদিত চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও যৌথ ঘোষণা সব মিলিয়ে অনেকগুলো বিষয়কে হাইলাইট করা প্রয়োজন। যেমন:
# ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের স্বরূপ
# ধারাগুলোর ভাষাগুলোতে কারচুপি- যেটা পি মুন্সী দেখিয়েছেন- 
# ট্রানজিট
# বন্দর
# পানি
# বিদ্যুৎ
# নিরাপত্তা
# সমুদ্র
# ঋণ
# বিবিধ

এবং সম্প্রতি এয়ারটেল কর্তৃক ওয়ারিদের ৭০% শেয়ার মাত্র ৭০ লাখ টাকায় কেনা, টেলি ট্রানজিটের দায়িত্বও এয়ারটেলের পাওয়া (বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের এক দিক থেকে আরেকদিকে অপটিক্যল ফাইবার)- এবিষয়কে নিয়েও লেখার আগ্রহ থাকলো।

তাড়াতাড়িই লেখার চেষ্টা করবো। ধৈর্য ধরে সাথে থাকার জন্যে সকলকে আগাম ধন্যবাদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন