গত বছর জুনে স্টাক্সনেট নামের যে ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে সেটিই এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কম্পিউটার ভাইরাস হিসেবে গণ্য হচ্ছে। কেউ কেউ একে বলছেন, ডিজিটাল ভাইরাস। কারণ ইন্টারনেট সংযোগ না থাকলেও এটি কম্পিউটারে আঘাত হানতে পারে। আগে মনে করা হতো, ইন্টারনেট সংযোগ নেই এমন কম্পিউটারে বড় ধরনের ভাইরাস আক্রমণ বোধহয় সম্ভব নয়। কিন্তু ‘স্টাক্সনেট’ সেই ধারণা পুরোটাই বদলে দিয়েছে। জার্মান সাময়িকী ‘ডেয়ার স্পিগেল’ এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ দীর্ঘ গবেষণা এবং বেশকয়েক মিলিয়ন ইউরো খরচ করে তৈরি করে এ ভাইরাস।
এ ভাইরাস ইরানের নাতানস পরমাণু কেন্দ্রের কম্পিউটারে আঘাত হানে। এসব কম্পিউটার পরমাণু সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার সেন্ট্রিফিউজ নিয়ন্ত্রণ করছিল। ভাইরাসটি এসব কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং ভুল কমান্ড দেয়ার মাধ্যমে সেন্ট্রিফিউজগুলো ধ্বংস করে। ২০০৯ সালের শেষ থেকে ২০১০ সালের শুরুর মধ্যে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে এ ক্ষতি করে স্টাক্সনেট। জার্মান হ্যাকারদের সংগঠন ‘কেওস কম্পিউটার ক্লাব’-এর সদস্য ফ্রাঙ্ক রিগার স্টাক্সনেট সম্পর্কে বলেছেন, এ ভাইরাস আসলে একটি ডিজিটাল বাঙ্কার বিস্ফোরক। এটিকে আধুনিক যুদ্ধের নতুন এক সমরাস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটি একটি কম্পিউটার ব্যবহার করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সামরিক হামলা পরিচালনায় সক্ষম।
কম্পিউটার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সিমেনটেক ইসরায়েলের প্রধান স্যাম অ্যাঞ্জল ডেয়ার স্পিগেল বলেন, স্ট্যাক্সনেট এখন পর্যন্ত আমাদের দেখা সবচেয়ে অত্যাধুনিক আক্রমণ। একটি সুরক্ষিত শিল্প ব্যবস্থায় এরকম আক্রমণ সহজ নয়। এ ভাইরাস এখন পর্যন্ত ইরান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত এবং বেলারুসের বিভিন্ন কম্পিউটার নেটওয়ার্কে হামলা চালিয়েছে।
বেলারুসের এক গবেষক সার্জেই উলাসেন প্রথম স্টাক্সনেট শনাক্ত করেন। মিনস্ক’র একটি নিরাপত্তা সংস্থার গবেষক সার্জেই, ২০১০ সালের জুন মাসে একটি ই-মেইল পেয়েছিলেন। একটি ইরানি প্রতিষ্ঠান সেই ই-মেইলে আজব এক সমস্যার কথা জানান। প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটারগুলো নাকি অদ্ভুত ব্যবহার করছে, নিজের ইচ্ছায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আবার চালু হচ্ছে। সার্জেই এবং তার সহকর্মীরা আক্রান্ত এসব কম্পিউটার সপ্তাহখানেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। সেখানেই প্রথম শনাক্ত হয় স্টাক্সনেট।
আক্রান্ত ড্রাইভ কোনো কম্পিউটারে যুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গেই গোপনে সেই কম্পিউটারে জায়গা করে নেয় স্টাক্সনেট। পরবর্তীতে কোনো রকম চিহ্ন না রেখে কম্পিউটারের অ্যান্টি ভাইরাস অকেজো করে দেয় এটি। এরপর উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের যে অংশ ফ্ল্যাশ ড্রাইভ নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে ঘাঁটি গাড়ে স্টাক্সনেট।
এ ভাইরাসের অন্যতম কাজ হচ্ছে কম্পিউটারে স্টেপ-৭ নামক একটি সফটওয়্যারের কার্যক্রম খুঁজে বের করা। এ সফটওয়্যারটি জার্মান প্রতিষ্ঠান সিমেন্স’র তৈরি। ইরানের নাতানস’র পারমাণবিক কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয় স্টেপ-৭ সফটওয়্যার। এটির সন্ধান পেলেই ধ্বংসলীলা শুরু করে স্টাক্সনেট।
এরই মধ্যে অবশ্য স্টাক্সনেট বধের ডিজিটাল অস্ত্র তৈরি করে ফেলেছে সিমেন্স। তবে, আশঙ্কা করা হচ্ছে এ ভাইরাসের পরবর্তী সংস্করণ হয়তো আরও বড় কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকাশ পাবে। সেই আশঙ্কা দমনে এখন বিস্তর গবেষণা শুরু করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। ইন্টারনেট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন