পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১১

সিলেট সীমান্তে ভূমি জরিপ : ২৭৪ একর জমি বুঝে নেয়ার পর ভারতের দৃষ্টি এখন তামাবিল ও ডিবির হাওরের দিকে

সিলেট সীমান্তে ২৭৪ একর ভূমি জরিপ করে ভারতকে বুঝিয়ে দেয়ার পর নদী থেকে পাথর, বালু উত্তোলন ও কৃষকদের কৃষিকাজে বাধা দিচ্ছে বিএসএফ। আন্দোলনমুখী সীমান্তবাসীকে বিজিবি, দাঙ্গা পুলিশ ও সাদা পোশাকদারী আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে মামলা হামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে জরিপ কাজ করেছে জরিপ টিম। ভারতের এখন লোলুপদৃষ্টি বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দর তামাবিল ও খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ ডিবির হাওর এলাকা। বিজিবিকে সীমান্ত পিলার পরিদর্শনে বাধা দিচ্ছে বিএসএফ।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ জরিপ কমিশন গঠন করে সীমান্তে জরিপ কাজ শুরু হয়। ভারতীয়দের আশানুরূপ সিদ্ধান্ত না হওয়ায় তারা বহুবার জরিপ কাজে বাধা দেয়। জরিপ টিম সূত্রে জানা যায়, গত ১ মাসে সিলেটর জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার পদুয়া সীমান্তের ১২৭০-৭১পর্যন্ত ২২০ একর, লিংকহাট সীমান্তে ১২৬৩-৬৭ পর্যন্ত ৮ একর, নলজুরী সীমান্তে ১২৭৭-৭৯ পর্যন্ত ৩৩ একর ভূমি এবং কুলুম ছড়া ১২৬৪-৬৫ নং পিলার পর্যন্ত প্রায় ২৭৪ একর ভূমি জরিপ করে ভারতকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এখন ম্যাপ তৈরির কাজ চলছে।
দেশের দ্বিতীয় স্থলবন্দর তামাবিল থেকে প্রতি বছর শতকোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়। সেই তামাবিল স্থলবন্দরের ভূমি এবং বিশেষজ্ঞদের মতে ডিবির হাওরে খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ ভূমির দিকে ভারতের দৃষ্টি রয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের আদেশ পাওয়া মাত্রই যে কোনো মুহূর্তে ওই ভূমি জরিপ করে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হবে বলে জরিপ সূত্রে জানা যায়। এদিকে ডিবির হাওর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার জানান, ডিবির হাওরের ১২৮৪ নং থেকে ১২৮৬ নং পিলার পরিদর্শনে বিএসএফ বাধা দিচ্ছে।
২০১০ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সীমানা পিলার পরিদর্শনে গেলে মুজিবুর রহমান নামের নায়েক সুবেদারকে পায়ে গুলি করে বিএসএফ ধরে নিয়ে যায়। সেই থেকে শুরু হয় সীমান্তে উত্তেজনা। জরিপের পর থেকে জরিপকৃত ভূমিতে কৃষি কাজ করতে গেলে বাংলাদেশী কৃষকদের বিএসএফ বাধা দেয়। বর্তমানে জরিপকৃত অনেক ভূমি বিএসএফ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাহারা দিচ্ছে। সীমান্তবাসী ওই এলাকায় কৃষিকাজ ও গরু চরাতে গেলে বিএসএফ বাধা দিচ্ছে।
এদিকে সীমান্ত এলাকার আবদুুল জলিল (৭০), শাফিউল্লাহ (৬৫), করিম উল্লাহ (৬০), নুরুজ্জামান (৬৫), আবদুুল মন্নান জানান, গত সাত মাস থেকে জরিপের নামে বাংলার ভূখণ্ড ভারতের হাতে তুলে দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। জরিপ হোক, জরিপ করে বাংলার ভূখণ্ড যথাস্থানে থাকুক সীমান্তবাসী তাই চায়। কিন্তু ৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে মানচিত্র রচিত হয়েছে তাকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে নতুন মানচিত্র তৈরি করবে তা আমরা কখনও মানব না। সীমান্তবাসীকে মামলা ও হামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে জরিপ করে ভারতের হাতে ভূমি তুলে দিচ্ছে সরকার।
সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা বলেছিল জরিপ করলে ভূমি ভারতকে দেয়া হবে না। গ্রামের সাধারণ কৃষকদের অবরুদ্ধ করে জরিপ করার পর জরিপকৃত ভূমিতে কৃষকরা হাল-চাষ করতে গেলে বিএসএফ বাধা দিচ্ছে। খাসিয়া হাওর সীমান্তবাসী জানায়, গত বছর নলজুরী নদী থেকে শত শত নৌকা শ্রমিক পাথর, বালু উত্তোলন করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। বিএসএফের বাধার ফলে তা এখন বন্ধ রয়েছে। শত শত শ্রমিক এখন বেকার হয়ে পড়েছে। ভারতের সীমানার মধ্যে এক ইঞ্চি ভূমিতেও জরিপ কাজ করতে পারছে না বাংলাদেশী জরিপ টিম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন