চেষ্টার পর চেষ্টা করেও অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের স্ত্রী শাহীন রাশেদা ইসলাম দেখা করতে পারেননি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। স্বামীর খুনিকে যেন ক্ষমা না করেন—এ আবেদন জানাতে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে বঙ্গভবন তাকে কোনো সহযোগিতা করেনি। অবশেষে কোনো উপায় না দেখে তিনি গতকাল রেজিস্টার্ড ডাকযোগে রাষ্ট্রপতি বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। এতে তিনি অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম হত্যামামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এএইচএম বিপ্লবের দণ্ড মওকুফের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন।
শাহীন রাশেদা ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তিনি কয়েকদিন ধরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা চালান। এজন্য তিনি বঙ্গভবনে বার বার ফোন করেন রাষ্ট্রপতির সচিব, এপিএস, পিও’র কাছে। তারা কোনো সহযোগিতা না করে একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। বঙ্গভবনের ফ্যাক্স নম্বরটি চেয়েও পাননি তিনি।
রাষ্ট্রপতিকে পাঠানো চিঠিতে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে জানতে পেরেছি গত ১৪ জুলাই আমার স্বামী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম হত্যামামলায় (চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মামলা নং ৪৮/২০০৩) ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এএইচএম বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড মওকুফ হয়েছে। ওই সংবাদে আমি এবং আমার পিতৃহারা সন্তানরা বিস্ময়ে হতবাক হয়েছে। আমি জানতে পেরেছি, আমার স্বামীর হত্যাকাণ্ড ছাড়াও আরও দুটি হত্যামামলায় বিপ্লবের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ রয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পলাতক থেকে মাত্র চার মাস আগে বিপ্লব আত্মসমর্পণ করেছে। মাত্র চার মাসের মাথায় এ ধরনের একজন দুর্ধর্ষ খুনি রাজনৈতিক বিবেচনায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুকম্পা পেতে পারে তা ছিল আমার ভাবনার অতীত।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি, স্বজন হারানোর ব্যথা কত দুঃসহ তা আপনি এবং আপনার সন্তানরা প্রতিনিয়ত অনুভব করেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীও স্বজন হারানোর বেদনা বয়ে চলেছেন। আপনজনের মৃত্যুর পর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে স্মৃতিচারণ করে কিংবা কবরে ফুল দিয়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও মানুষ সান্ত্বনা লাভ করে। এমনই দুর্ভাগ্য, আমি ও আমার সন্তানরা সে সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছি। আমার স্বামীকে অপহরণের পরদিন সকালে লক্ষ্মীপুরের ডিসি অফিসে বিপ্লব আমার স্বামীকে মুক্তি দেয়ার বিষয়ে তদানীন্তন ডিসি, এসপি ও লক্ষ্মীপুর বারের সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে প্রকাশ্যে দর কষাকষি করেছে। আর এখন দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে নিয়োজিত ক্ষমতাধর মন্ত্রী মহোদয়রা বলছেন, বিপ্লবকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় বেরিয়ে এসে বিপ্লব যখন মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বীরদর্পে বলবে, আমাকে মিথ্যা মামলায় আটকে রাখতে পারেনি, সে দৃশ্যও আমি ও আমার সন্তানদের অসহায়ভাবে দেখতে হবে। এর চেয়ে যন্ত্রণা আর কী হতে পারে?’
চিঠিতে তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামীর হত্যাকারী বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড মওকুফ ন্যায়ানুগ হয়নি বলেই আমার বিশ্বাস। বিপ্লবের দণ্ড মওকুফের ফলে আমি ও আমার গোটা পরিবার আজ চরম হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। দেশের একজন সামান্য নাগরিক হিসেবে আপনার কাছে আমার ও আমার সন্তানদের আকুল আবেদন, বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড মওকুফ সংক্রান্ত ১৪ জুলাইর আদেশ পুনর্বিবেচনা করে আমার ও সন্তানদের যন্ত্রণাদগ্ধ হৃদয়ের কষ্ট লাঘব করবেন।’
রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও পাঠানো হয়েছে।
নূরুল ইসলামের স্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে এ কথাগুলোই বলতে চেয়েছিলাম। সে সুযোগ আমাকে দেয়া হলো না। আমি আশা করেছিলাম, রাষ্ট্রপতি তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না। কিন্তু সে আশা হলো কেবল পরাহত। তিনি দেশের ১৫ কোটি মানুষের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী যথাক্রমে ২১ আগস্ট, ১৫ আগস্ট এবং ৩০ মে তাদের প্রিয়জনের রুহের মাগফিরাত কামনায় কবরস্থানে যান, আমি কোথায় যাব? বাংলাদেশের বৃহত্ রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর, লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের তত্কালীন সভাপতি শাহজাহান কামাল যদি এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, আমার স্বামীর হত্যামামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির দণ্ড মওকুফ হলে একজন নারী হয়ে আমার ও আমার পরিবারের কী হতে পারে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন