"দোস্ত, কালকে উত্তরায় র্যাব ৫ জনকে মারছে সেইটা তো জানস।প্রথম দুইজন কে লেকের পারে কিভাবে মারসে সেটা জানিনা, কিন্তু গাড়ির ভিতরের লোক গুলা কে কিভাবে মারছে সেটা সবাই দেখছে। ওরা হঠাৎ করে উত্তরা ৭ নাম্বার সেক্টরে লেক ড্রাইভ রোড এর একটু সামনে উলটা দিকে ফারমা ল্যান্ড নামের একটা দোকানে আসে। সেইখানে আমি আর আমার কয়েকজন বন্ধু দাড়ায় ছিলাম। হঠাৎ দেখি র্যাব একটা গাড়িকে কোন কিছু স্যার্চ না করে গুলি করা শুরু করছে। গুলি শুরু হওয়ার পরে আমরা দৌড়ায় পালাইছি। পরে দেখলাম ঐ গাড়িটা থেকে র্যাব লাশ নামাইতেছে। লাশ গুলা নামায় ওরা লেকের সামনে আর রাস্তায় ফেলে রাখছিল। এরপরে যে কি হইছে সেটা তোরা সবাই জানোস। কিন্তু আমার কথা হইল ওরা ছিনতাইকারী হতে পারে, কিন্তু র্যাব ওদেরকে স্যার্চ করে নাই। আর এক জায়গায় একই সাথে ২ টা ছেলেকে মারালো, ঐ জায়গায় গাড়ি লক্ষ করে ওরা গুলি করলো কিভাবে? আর প্রথম মার্ডার ২ টা হওয়ার পরে সব গাড়ি লেক রোড দিয়ে ঘুরায় দিছে, কিন্তু শুধু ঐ গাড়ি টা ঐখানে গেলো কেমনে?"
উপরের কথা গুলো আমার এক বন্ধুর, সে নিজে উত্তরার বাসিন্দা এবং উক্ত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। আমরা বিগত দুই দিন খবরের কাগজে দেখলাম র্যাব তাদের বিভিন্ন বিবৃতি দিচ্ছে, যার মাঝে খোরা যুক্তির সংখ্যা টা একটু বেশি। এই ছেলে গুলো আসলেই ছিন্তাইকারি ছিল কিনা সেটা র্যাব কোন কিছুতেই প্রমান করতে পারেনি। তবে র্যাব এবং পুলিশ অস্ত্র উদ্ধারের যেই নাটক দেখিয়েছে এমন নাটক আগেও অনেকবার দেখানো হয়েছে। এলাকাবাসীর তথ্যমতে ঘটনার সময় ঐ এলাকায় বিদ্যুৎ ছিলনা, র্যাব শুধু ঐ গাড়িটি কে আলাদা ভাবে সরিয়ে নেয় এবং এক পর্যায় গুলি শুরু করে। কিন্তু র্যাব বলছে গাড়ি থেকে আগেই গুলি করেছিল। যদি তাই হয় তবে তারা কি করে গাড়িটা কে রাস্তার একটি পাশে সরিয়ে নিল। আজকের খবর এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলছে তাতে দেখা যায় র্যাব গুলি করার জন্য আগের থেকে প্রস্তুত ছিল এবং কোন গাড়িটাকে গুলি করা হবে সেটাও নির্ধারিত ছিল। যদি এটাই হয়ে থাকে তবে এই কথা বলতে আর বাধা নেই যে এতা ছিল সম্পূর্ণ একটি পরিকল্পিত হত্যা। হতে পারে তারা ছিনতাইকারী অথবা অপরাধী, তবে কোন প্রকার কারন দর্শানো ছারাই এভাবে ৫ জন তরুণকে হত্যা করা হল তাহলে এখানে অপরাধী কারা? আজকের খবরের কাগজে দেখা যায় প্রথম ২ জন কে হত্যা করা হয়েছে একটা নার্সারিতে, সেখানে নার্সারির বেশ কিছু টব এলমেলো ভাবে পরে আছে, আর সেখানে বেশ কিছু রক্ত জমাত হয়ে আছে। অর্থাৎ বুঝা যায় তাদের কে ওখানেই হত্যা করা হয়েছে এবং সে সময় তারা বাচার চেষ্টা করলে টব গুলো এলমেলো হয়ে যায়। এলাকাবাসী, প্রত্যক্ষদর্শী এরা কেও "বন্দুক যুদ্ধের" মত কিছুই দেখেননি, কিন্তু র্যাব এবং পুলিশ বারবার একটা কথাই বলছে যে- এটা ছিল বন্দুকযুদ্ধ। অর্থাৎ বাস্তবতার সাথে তাদের কথার কোন মিল নেই। তার মানে এটা আবার পরিষ্কার ভাবে প্রমান হয় যে এটা ছিল পরিকল্পিত হত্যা।
আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নামক সন্ত্রাসী বাহিনীরা বিগত কয়েকমাসে এমন আরো বেশ কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লিমন কে পঙ্গু করা এবং মিলন কে হত্যা। আমরা যদি একটু দেশের বাইরে তাকাই তবে এরকম দৃষ্টান্তের ফল কতটা ভয়ানক হতে পারে সেটা দেখতে পাব। উদাহরণ সরূপ বলা যায় যুক্তরাজ্যের টটেনহা্ম এর ভয়ানক পরিস্থিতি। টটেনহা্মের আগুন একদিনে লাগেনি, এই কথাটা আমি আগেও আমার একটা পোস্টে বলেছি , পোস্ট টা এখানে বহুদিনের পুঞ্জিভিত ক্ষোভ থেকেই এই আগুনের সৃষ্টি হয়েছে। ঠিক যেমন আমাদের দেশে এখন চলছে এবং ক্ষোভ জন্মাচ্ছে জনগণের মাঝে। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার সেই আগুন নেভাতে শেষ পর্যন্ত সার্থক হয়েছে, এর অর্থ এই নয় যে আমাদের সরকার এবং সন্ত্রাসী মাতা সাহারা খাতুন এমন আগুন নেভাতে সার্থক হবে। যদি টটেনহা্মের আগুন আমাদের দেশে লাগে তবে সেই আগুনে পুরে মরতে হবে আমাকে এবং আপনাকেও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন