ডিবি পুলিশের নির্যাতনে অজ্ঞান হওয়া আইনজীবী সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমইউ আহমদের জ্ঞান এখনও ফেরেনি। মৃত্যুর মুখোমুখি অজ্ঞান এ আইনজীবীকে ডিবি ছেড়ে দিতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছে। তার স্ত্রীকে চাপ দিচ্ছে এমইউ আহমদকে পরিবারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চিকিত্সার দায়িত্ব নেয়ার জন্য। সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে এমইউ আহমদকে পরিবারের কাছে ছেড়ে দিতে চাচ্ছে ডিবি পুলিশ।
এদিকে ডাক্তাররা জানিয়েছেন তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। রক্তচাপ কমে একেবারে শূন্যে চলে যাচ্ছে। ওষুধ ও চিকিত্সা দিয়ে রক্তচাপ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে বর্তমানে ডাক্তারদের গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছেন পুলিশের নির্যাতনের শিকার এ আইনজীবী।
গত বুধবার দিবাগত গভীর রাতে সেগুনবাগিচার বাসায় হামলা চালিয়ে ডিবি পুলিশ এমইউ আহমদকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ডিবি অফিসে। সেখানে নির্যাতনে অজ্ঞান হয়ে পড়েন সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। অবস্থার অবনতি দেখে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ভোররাতে এ অজ্ঞান আইনজীবীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রাখেনি। তখন ডিবি তাকে নিয়ে যায় শেরেবাংলা নগরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। সেখানে ডাক্তাররা তাকে ভর্তি করে চিকিত্সা দিলেও গত ২ দিনেও তার জ্ঞান ফেরেনি। অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে।
গত ২ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্রের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মুফতি ফজলুল হক আমিনীর বিরুদ্ধে একটি মামলার আদেশে বিরোধীদলীয় নেতার দেশপ্রেম নিয়ে কটাক্ষ করলে প্রতিবাদ করেন উপস্থিত আইনজীবীরা। আইনজীবীদের এ প্রতিবাদে যৌথভাবে বাধা দেন সরকারি দলের সমর্থক আইনজীবী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের আইন কর্মকর্তারা। এতে সরকারি দলের সমর্থক আইনজীবী ও বিরোধীদলের সমর্থক আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতি হয় আদালতের ভেতরে। ঘটনার পর ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তা বাদী হয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে বিরোধীদলের সমর্থক ১৪ আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এ মামলায় আইনজীবীদের জামিন আবেদন শুনানিতে হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ বিব্রতবোধ করার পর আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়। প্রধান বিচারপতির বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় আদালত অঙ্গন থেকে গ্রেফতার হন অ্যাডভোকেট সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া এমপিসহ ৩ আইনজীবী। পরবর্তীতে জামিন আবেদনটি প্রধান বিচারপতি আরেকটি বেঞ্চে প্রেরণ করেন। সেই বেঞ্চ জামিন আবেদন খারিজ করে দেয়। সেই খারিজ আদেশ দেয়ার পর রাতেই এমইউ আহমদকে গ্রেফতার অভিযান চালায় ডিবি। তিনি এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। গ্রেফতারের পর তার ওপর নির্যাতন চালানো হয় বলে দাবি করেছে তার পরিবার। পুলিশ হেফাজতেই তার চিকিত্সা চলছে।
গতকাল এমইউ আহমদকে দেখতে সুপ্রিমকোর্টের জ্যৈষ্ঠতম আইনজীবী ও সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বিচারপতি টিএইচ খান, সুপ্রিমকোর্ট বারের বর্তমান সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সেক্রেটারি ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলসহ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা হাসপাতালে যান। সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি ও সম্পাদক এমইউ আহমদ অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই সার্বক্ষণিক তার চিকিত্সার খোঁজখবর নিচ্ছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন