ট্রানজিট বিষয়ে আগে কে কি বলেছিলেন ১৮ আগস্ট বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘‘প্রতিবেশী দেশ ভারতকে ট্রানজিটসুবিধা দেওয়া হলে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।’’ অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘‘প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিবেশী দেশকে ব্যবহার করতে দিলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে।’’ ট্রানজিটের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে ১২ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেছিলেন, ‘‘ভারতকে বন্দর ব্যবহার করতে না দিলে, ট্রানজিট না দিলে, বাংলাদেশের উন্নতি হবে না।’’ ট্রানজিট নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছিল, ‘‘বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিটসুবিধা দিলে তার বিনিময়ে ট্যারিফ বাবদ বছরে প্রায় ৭০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকা পাবে। মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে হবে।’’ রিসার্চ ফর ডায়ালগ নামের একটি সংস্থা বলেছিল, ‘‘ভারতকে চট্টগ্রাম আর মংলা বন্দর ব্যবহার করতে দিলে বাংলাদেশ ছয় হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারবে।’’ ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তিকে অর্থনীতির জন্য সহায়ক, অর্থবহ, গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর হিসেবে অভিহিত করে ১১ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ বলেছিলেন, ‘‘ঋণের অর্থ দিয়ে দেশের সড়ক, রেল, বন্দরসহ অবকাঠামো উন্নয়ন হবে, যা পারস্পরিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ করবে। পণ্য পরিবহনে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে ট্রানজিট দিলে বছরে বাংলাদেশ আয় করবে ৭০০-৮০০ কোটি টাকা।’’ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘‘ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হলে দেশের ক্ষতি হবে বলে যে প্রচারণা চলছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।’’ অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘প্রতিবেশী দেশগুলোকে ট্রানজিট দেওয়ার মাধ্যমে আমরা যেমনি অথনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারি, তেমনি সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’’ ডা. দীপু মনি দাবি করেন, ‘‘১৯৭৫-পরবর্তী সরকারগুলোর ভুল নীতির কারণেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নয়ন হয়নি।’’ এদিকে ভারতকে করিডোর দেওয়ার জন্য এডিবির পরামর্শের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন হলো ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে লাভবান হওয়া।’’ ৬ জুলাই ২০০৯ বাংলাদেশ সফররত এডিবি মহাপরিচালক কুনিও সেঙ্গা অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ভারতকে করিডোর দেওয়ার পরামর্শ দেন। এডিবির মহাপরিচালক বলেছেন, ‘‘ভারতকে করিডোর দিলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’’ এর আগে ২০০৭ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছিলেন,‘‘ভারতকে ট্রানজিট প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় করতে পারবে।’’ বিশ্ব ব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ভারতকে করিডোর এবং ট্রানজিট প্রদান বিষয়ে বরাবরই অতি আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। বিশ্বব্যাংক ট্রানজিট সড়ক নির্মাণের জন্য ৮০ কোটি ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমান ট্রানজিট সুবিধা থেকে কোন ধরনের ফি বা মাশুল আদায়ের ঘোরতর বিরোধী। তিনি এও বলেছেন যে, ট্রানজিটের বিনিময়ে কোন ধরনের অর্থ চাওয়া এক ধরনের অসভ্যতা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি তার মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘‘ট্রানজিট হলো বাংলাদেশের আয়-রোজগারের একটা মাধ্যম। ফলে ট্রানজিট ফি কোনোভাবেই মওকুফ করা হবে না।’’ কিন্তু তার এই মন্তব্য এখন আর ঠিক থাকছে না। ট্রানজিট ফি ইতোমধ্যেই স্থগিত করা হয়েছে। ট্রানজিট চুক্তি চূড়ান্ত না খসড়া? ট্রানজিট চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত নাকি খসড়া পর্যায়ে— এই প্রশ্ন নিয়েই শুরু হয়েছে আলোচনা। ট্রানজিট চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণার এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস জানিয়েছেন, ট্রানজিট চুক্তির বিষয়টি এখনও খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। দু’দেশের এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ট্রানজিট নিয়ে চলমান বিতর্কে নতুনমাত্রা যোগ করবে। ঢাকা সফরে এসে গত ৭ জুলাই ২০১১ বৃহস্পতিবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ট্রানজিট চুক্তির বিষয়টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই দাবির কোনো বিরোধিতা করেননি। ভারতের পর-রাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার একদিন পর ৯ জুলাই ২০১১ পর-রাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় কমিটির ১২তম বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ট্রানজিট চুক্তির বিষয়টি এখনও খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। বৈঠকে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ট্রানজিটসহ ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে আলোচনার দাবি জানালে পররাষ্ট্র সচিব ওই বক্তব্য দেন বলে মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের জানান। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি উপস্থিত থাকলেও ট্রানজিট বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। (সূত্র: আমার দেশ ১০.০৭.২০১১) |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন