পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১১

৩০ কোটি টাকা বেশি ব্যয়ে ভারতীয় বিমান কিনছে নেভি

নৌবাহিনীর জন্য জার্মানির মোড়কে ভারতে তৈরি উপকূল বা সমুদ্র পর্যবেক্ষণ বিমান কিনছে সরকার। সর্বনিম্ন দরদাতা দুটি মার্কিন কোম্পানিকে পাশ কাটিয়ে ভারতে তৈরি বিমান ক্রয়ের জন্য তৃতীয় স্থানে থাকা কোম্পানিকে ক্রয় আদেশ দেয়া হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের অতিরিক্ত ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ২০১০ সালে উপকূল বা সমুদ্র পর্যবেক্ষণ বিমান কেনার জন্য সরকার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। এই দরপত্রে ৫টি কোম্পানি অংশ নেয়। এর মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল আমেরিকার দুটি কোম্পানি। তারা আধুনিক নিউ জেনারেশন বিমান সরবরাহের প্রস্তাব করেছিল। দরপত্রের মূল্য তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল জার্মানির রুয়েগ। কোম্পানি জার্মানির নামে হলেও বিমান তৈরি হবে ভারতীয় একটি কোম্পানির মাধ্যমে ভারতের কানপুরে। বিমান দুটির মডেল হচ্ছে ডিও ২২৮ এনজি। রুয়েগ কোম্পানি থেকে গত বছরের ২৯ নভেম্বর প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ডিও ২২৮ এনজি অত্যাধুনিক বিমান। এটি ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রচলিত ডিও ২২৮-২১২ বিমানের উন্নত সংস্করণ। এই বিমানের মূল অংশ
ডানা ও পেছনের অংশ ভারতের কানপুরে অবস্থিত হিন্দুস্থান অ্যারোনটিকস লিমিটেডের (এইচএএল) তৈরি। অর্থাত্ জার্মানির নামে হলেও বিমান দুটি ভারতীয় কোম্পানির তৈরি। মার্কিন কোম্পানির চেয়ে দামও ৩০ কোটি টাকা বেশি দিতে হবে সরকারকে। এছাড়া পরবর্তীতে এই বিমান রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে।
সর্বনিম্ন দরদাতাকে না দেয়ার পেছনে যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ ধরনের বিমান সরবরাহে সেই দেশের সরকারের অনুমোদন রয়েছে কিনা তা জানতে হবে। সর্বনিম্ন দরদাতা কোম্পানি দুটি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে ছাড়পত্র এনে দেখানোর পরও ক্রয় আদেশ মেলেনি। ভারতীয় লবির তদবিরে ৩০ কোটি টাকা বেশি দিয়ে দরপত্রে তৃতীয় স্থানে থাকা কোম্পানিকে ক্রয় আদেশ দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক করার উদ্যোগ নেয়া হয়। অর্থাত্ নৌবাহিনীকে সাবমেরিন জাহাজ, সাধারণ টহল জাহাজ ও বিমানের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করার সরঞ্জাম সরবরাহের উদ্যোগ নেয় চারদলীয় জোট সরকার। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে তখন বিমান সংযোজনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের আগেই চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়। পরে অসাংবিধানিক জরুরি সরকারের আমলে চারদলীয় জোট সরকারের গ্রহণ করা উদ্যোগ স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে আবার উদ্যোগটি সচল এবং বিমান ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করে। এই দরপত্র অনুযায়ী ২০১০ সালের নভেম্বরে রুয়েগের সঙ্গে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৩ সালে বিমান দুটি বাংলাদেশে সরবরাহের কথা।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নৌবাহিনীতে সমুদ্র পর্যবেক্ষণ বিমান সংযোজন নিঃসন্দেহে একটি ভালো ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে এই উদ্যোগ নিলে পরে দেশের জন্য লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি ডেকে আনবে। ১৯৭৫ সালের পর ভারতের কোনো সমরাস্ত্র বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ভারতে তৈরি বিমান নৌবাহিনীতে সংযোজনের মাধ্যমে ভারতীয় সমরাস্ত্র সশস্ত্র বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হবে। এতে সমরাস্ত্রেও ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে। দেশের ভূমি ও সমুদ্র উপকূল সীমান্ত হচ্ছে ভারতের সঙ্গে। ভারতীয় সমরাস্ত্রে এই সীমান্ত ও উপকূল পাহারা দেয়া বা পর্যবেক্ষণ করা কতখানি যুত্সই হবে তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন