আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে থেকে ১৯৭৪ সাল ch©š— সেনাবাহিনীর অধিকাংশ অফিসার এর সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক স্বাভাবিক ছিল। একটু একটু একটু অসন্তোষ অবশ্য আগে ই শুরু হয়েছিলো । ১৯৭৪ সালে ভারতীয় সীমান্ত উম্মুক্ত করে দেয়া হয়। এদিকে দেশে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সেই সাথে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি । বঙ্গবন্ধুর কেবিনেট ছিল যথেষ্ট অনভিজ্ঞ, অদক্ষ, ও দুর্নীতিবাজ । বঙ্গবন্ধু অসহায় হয়ে পড়েছিলেন, যথেষ্ট আন্তরিকতা থাকলে ও তিনি দুর্নীতি কমাতে পারেন নি। এ অবস্থায় ভারতীয় সীমান্ত উম্মুক্ত করে দেয়ার ঘটনার ব্যাপক বিরধিতা করে রব ও জলিলের জাসদ। তারা সীমান্ত রক্ষায় সেনাবাহিনী ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু সেই দাবি সরকার মেনে নেয়নি। সেনাবাহিনী ও নিজেরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে সাহস করেনি। এর আগের কিছু অভিজ্ঞতা সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে আলাদা মনভাব তৈরি করে দিয়েছিল। সেনাবাহিনীর মধ্যে জারা মুক্তিযোদ্ধা তারা দু বছরের সিনিয়রিটি পাওয়ায় যারা পাকিস্তানে আটকা পড়েছিল এবং সিনিয়রিটি পায়নি তাদের সাথে একটা দূরত্ব আগে থেকেই তৈরি হয়ে ছিল । উপরন্তু সিনিয়রিটি পাওয়াদের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৫ শতাংশ। তাদের দাপট ই বেশি ছিল। একই সময়ে ভারতীয় সেনাবাহীনির লুটপাটে বাধা দেয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলকে গ্রেপ্তার করে মুজিব সরকার। এদিকে কর্নেল জিয়াউদ্দিন (জিয়উর রহমান নন) ্রকটি পত্রিকায় সরকারের সমালোচনা করে বাহিস্কৃত হন।
স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্তানি সাশকগোষ্ঠি ও জনগন আমাদের দেশের মানুষের সাধে অমানুষের মত ব্যবহার করত । এদেশের মুসলমানদের বলত মালাউন।এসব কারনে ভারতীয়দের প্রতি এদেশের জনগনের একটি সিমপ্যাথি ছিল যে পাকিস্তানিরা অহংকারী এবং খারাপ সেই তুলনায় ভারতীয়রা বেশ ভাল।কিন্তু ভারতীয়দের প্রতি সেই মনোভাব ৭৩-৭৪স এ এসে কিছুটা কমতে শুরু করে।
মুজিব প্রশাসন স্পস্টত ভারতের পক্ষ নেয়ায় সেনাবাহীনির মধ্যে দুটি গ্রুপিং তৈরি হওয়াটা অবধারিত ছিল। জেনারেল ওসমানীর সাথে জিয়ার কিছু বিষয়ে মতানৈক্য থাকলেও ভারতীয় এসব কর্মকান্ডের বিরোধীতায় দুজনেই একাট্রা ছিলেন। জেনারেল ওসমানী তো ইন্দিরা গান্ধির নামই শুনতে পারতেন না। এমনকি পরবর্তী সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহ , খালেদ মোশাররফ, জেনারেল মনজুর কেউই ভারতকে ভাল চোখে দেখতেন না। মুক্তিযুদ্ধের পরে ভারতীয়দের মাতব্বরি ও লুটপাট এদের সবাইকে ক্ষেপিয়ে তোলে। এদিকে মুজিব বাহিনীর সদস্যদের সেনাবাহীনিতে নিতে সেনাবাহীনি আজত্তি তোলে। বঙ্গবন্ধু এদর দিয়ে একটি প্যারামিলিটারী বাহিনী ( রক্ষীবাহীনি) গঠন করেন। এরা সারাদেশে লুটপাট ও হত্যা ধর্ষন, গুম, ব্লাকমেইল ইত্যাদির মাধ্যমে এক ধরনের ত্রাসের রাজত্ত কায়েম করে। এ সবকিছুর জন্য সেনাবাহীনি ভারতকে মদদদাতা হিসেবে মনে করে।ফলে ভারত বিরোধীতা আরো বাড়তে থাকে। সেনাবাহিনীর সিনিয়রদের মধ্যে শফিউল্লহ ও খালেদ মোশাররফ পুরোপুরি শেখ সাহেবের অনুগত ছিল। এরা খুব ঘন ঘন তার সাতে দেখা করতে পারতেন । কিন্তু জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হত। খালেদ মোশাররফ ও শফিউল্ল্হা দুজনেই বাকশাল এ নাম লিখিয়েছিলেন। জিয়া তখন ক্যান্টনমেন্টে অনেক প্রভাব রাখতেন। বএবং কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুর কছে গিয়ে জিয়ার বিরুদ্ধে নালিশ করতো। বঙ্গবন্ধুও জিয়ার প্রতি একটু ক্ষেপে গিয়েছিলেন। তিনি জিয়াকে আর ক্যান্টনমেন্টে রাখতে চাননি। তাকে জার্মানী অথবা বেলজিয়ামে রাষ্ট্রদূত করে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারী থেকেই জিয়া আশংকা করেছিলেন যে তার চাকরী পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে ন্যাস্ত করা হতে পারে।
জিয়া কোন অবস্থাতেই দেশ ছাড়তে চাননি। তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর কাছে তদবির শুরু করেন। এতে তেমন কাজ না হওয়ায় জিয়া তার এওক অনুগত মেজরকে ইওয়ামীলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ এর কাছে পাঠান। তোফয়েল বিষয়টি বঙ্গবন্ধুকে বুঝিয়ে বলবেন বলে আশ্বাস দেন এবং জিয়াকে বাকশালে নাম লেখাতে পরামর্শ দেণ। জিয়া তখন যে কোন মূল্যে দেশে থাকতে চাচ্ছিলেন। ফলে তিনিও বাকশালে নাম লেখালেন। কিন্তু তারপরেও তাকে বিদেশে পাঠানোর ঝুঁকি থেকে তিনি নিশ্চিন্ত হতে পানেননি ।
পুনশ্চঃ বর্তমানে এই লেখার কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে সে সম্পর্কে আমি সচেতন। এই লেখাটা স্রেফ সঠিক ইতিহাস জানানোর একটি প্রচেষ্টা। বর্তমান ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুভাবাপন্ন সম্পর্ক রয়েছে। এটা আরো সুদৃঢ় হোক তাই আমার প্রত্যাশা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন